আফগানিস্তানের মানবাধিকার কর্মী, যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়ে প্রত্যাখ্যাত, তালিবানের হুমকি সত্ত্বেও!
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে নারী অধিকার রক্ষার জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ করা এক আফগান নারীর যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির সরকার। মিনা (প্রকৃত নাম গোপন রাখা হলো), যিনি পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতেন এবং নারী অধিকার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তাকে এখন যুক্তরাজ্যে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ব্রিটিশ সরকারের মতে, বর্তমানে আফগানিস্তানে ফিরলে মিনার জীবনহানির কোনো আশঙ্কা নেই।
আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা দখলের পর নারীদের অধিকার মারাত্মকভাবে খর্ব হয়েছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং চলাফেরার স্বাধীনতা সহ তাদের মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, মিনার মতো যারা নারী অধিকারের পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের জীবন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
পশ্চিমা সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে কাজ করার কারণে তালিবানের পক্ষ থেকে তাদের ওপর হামলারও আশঙ্কা রয়েছে। মিনার ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে।
মিনা জানান, তিনি যখন পশ্চিমা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তখন প্রায়ই বোমা হামলা ও অপহরণের হুমকির মধ্যে থাকতেন। প্রতিদিন সকালে পরিবারের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে, তিনি জানতেন না যে সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গে তার দেখা হবে কিনা।
অনেক সহকর্মীকে তিনি হারিয়েছেন, যাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তালিবান সরকার নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘নৈতিকতা প্রচার ও দুর্নীতি দমন মন্ত্রণালয়’ রেখেছে, যা নারীদের অধিকার হরণের একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর সাধারণত সেসব আফগান নারীর আশ্রয় আবেদন গ্রহণ করে থাকে, যারা তালিবানের নিগ্রহের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে যারা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেন এবং পশ্চিমা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
কিন্তু সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। ২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে ২৬ জন আফগান নারীর আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। শুধু তাই নয়, একই সময়ে প্রায় ২ হাজার আফগান আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
যেখানে ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে ৯৮.৫ শতাংশ আবেদন গৃহীত হয়েছিল, সেখানে ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশে।
মিনার আইনজীবী জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ, যে নারী আফগানিস্তানে নারী অধিকার রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাকেই কিনা এখন দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্যের উচিত ছিল মিনার মতো একজন সাহসী মানুষকে আশ্রয় দেওয়া। এই ধরনের সিদ্ধান্ত আফগানিস্তানে পশ্চিমা মূল্যবোধের পক্ষে কাজ করা সকলের প্রতি চরম অবিচার।
মিনা বলেন, “এখানে আসার পর আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, আমি একটি নতুন জীবন শুরু করতে পারব। আফগানিস্তানে আমি মানুষ হিসেবেও গণ্য হতাম না। এখানে আমি সাইকেল চালানো শিখেছি, যা আমার দেশে নিষিদ্ধ ছিল।
জীবন পরিবর্তনের একটা সম্ভাবনা জেগেছিল। কিন্তু আমার জীবন যেন থমকে গেছে। আমি এখনো আশা করি, কেউ আমার জীবনকে আবার শুরু করতে সাহায্য করবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান