বাবার মৃত্যু বাঁচিয়েছিল জীবন: ক্যান্সারের বিরুদ্ধে স্টিভ ম্যাককুইনের লড়াই

বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা স্টিভ ম্যাককুইন, যিনি একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী, সম্প্রতি একটি কঠিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

এই অভিজ্ঞতা থেকে, তিনি পুরুষদের স্বাস্থ্য, বিশেষ করে প্রস্টেট ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একটি প্রচারণা শুরু করেছেন। ম্যাককুইন মনে করেন, এই রোগ সম্পর্কে পুরুষদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা খুবই জরুরি, কারণ এর প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ জীবন বাঁচাতে পারে।

ম্যাককুইনের বাবারও প্রস্টেট ক্যান্সার হয়েছিল এবং তিনি এই রোগেই মারা যান। তাই, নিজের শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর, তিনি অনুভব করেন যে বাবার মৃত্যুর ঘটনা যেন তাকে জীবন দিয়েছে।

তিনি জানান, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সচেতনতা এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রস্টেট ক্যান্সার আসলে কী? এটি পুরুষের প্রস্টেট গ্রন্থিতে হওয়া একটি ক্যান্সার। প্রস্টেট গ্রন্থিটি মূত্রাশয়ের নিচে এবং মলদ্বারের সামনে অবস্থিত।

এই গ্রন্থি বীর্য তৈরিতে সাহায্য করে। সাধারণত, প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।

তবে, রোগের বিস্তার ঘটলে প্রস্রাবের সমস্যা, কোমর ও হাড়ে ব্যথা হতে পারে।

চিকিৎসকরা বলছেন, ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। বিশেষ করে যাদের পরিবারে এই রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের জন্য এটি আরো বেশি জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। আমাদের দেশে যদিও জাতিগত বিভাজন সেভাবে নেই, তবে স্বাস্থ্যসেবা এবং সচেতনতার অভাবে অনেক সময় রোগ নির্ণয়ে দেরি হতে পারে।

ম্যাককুইন মনে করেন, পুরুষদের মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনা এখনো দুর্বল। অনেক পুরুষ তাদের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।

এই কারণে রোগ মারাত্মক রূপ নেয়। তিনি চান, পুরুষরা তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন হোক এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিক।

চিকিৎসকরা জানান, প্রস্টেট ক্যান্সার শনাক্তকরণের জন্য পিএসএ (PSA – Prostate-Specific Antigen) পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের মধ্যে প্রস্টেট-নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের মাত্রা মাপা হয়।

পিএসএ-এর মাত্রা বেশি হলে ক্যান্সার হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করার জন্য আরও পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

ম্যাককুইন তার ক্যান্সারের চিকিৎসার কথা বলতে গিয়ে জানান, তিনি অস্ত্রোপচার করিয়েছেন এবং এখন সুস্থ আছেন। তিনি চান, তার অভিজ্ঞতা অন্যদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করুক।

তার মতে, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে এই রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা দরকার।

প্রখ্যাত এই চলচ্চিত্র নির্মাতার মতে, সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি, স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য করা উচিত। স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসার খরচ যাতে সবার জন্য বহনযোগ্য হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *