শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন: ‘লজ্জা’কে জয় করে সাড়া জাগানো লেখকের সাহসী গল্প

ফ্রান্সের সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করা একটি আত্মজীবনীমূলক বই, “সাদ টাইগার” (Sad Tiger)। লেখক নিগে সিনো, যিনি শৈশবে ফ্রান্সের আল্পস অঞ্চলে সৎ বাবার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তাঁর জীবনের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাই তুলে ধরেছেন বইটিতে।

২০২৩ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর বইটি দ্রুতই পাঠকদের মন জয় করে নেয় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

বইটি প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে লেখা হয়েছে। এর ভাষাশৈলী অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ঘটনার ঘনঘটা পাঠকের মনে গভীর দাগ কাটে।

খ্যাতিমান ফরাসি সাহিত্যিক অ্যানি এরনাক্স এই বইটির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছিলেন, “সাদ টাইগার পড়া যেন খোলা চোখে একটি গভীর খাদে অবতরণ করার মতো। এটি আপনাকে বাধ্য করে, একজন প্রাপ্তবয়স্কের দ্বারা বছরের পর বছর ধরে নির্যাতিত একটি শিশুর যন্ত্রণা দেখতে, অনুভব করতে।”

“সাদ টাইগার”-এর বিষয়বস্তু নিগে সিনোর নিজের জীবন থেকে নেওয়া। বইটিতে সিনো তাঁর সৎ বাবার দ্বারা শৈশবে হওয়া যৌন নির্যাতনের স্মৃতিচারণ করেছেন।

সেই সময় পরিবারের সদস্যরা কীভাবে একটি পুরাতন বাড়িতে বাস করতেন, যেখানে তাঁদের জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত কষ্টের, এমনকি স্যাঁতস্যাঁতে বেসমেন্টে ঘুমাতে হতো। নির্যাতনের শিকার হওয়ার সময় সিনোর বয়স ছিল মাত্র ছয় থেকে ১৪ বছর।

সিনো তাঁর স্মৃতিচারণে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, কীভাবে তাঁর সৎ বাবা পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে রাখতেন। সিনো জানিয়েছেন, তাঁর সৎ বাবা সবসময়ই ছিলেন খুবই প্রভাবশালী এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

আদালতে তিনি এমন সব কথা বলতেন, যা শুনে অনেক সময় মনে হতো, তিনি যেন পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ অন্য দিকে ঘোরাতে চাইছেন।

বইটিতে সিনো তাঁর অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ভ্লাদিমির নাবোকভের “লোলিতা” উপন্যাসটির একটি বিশ্লেষণও করেছেন।

তাঁর মতে, “লোলিতা” শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতনের মানসিক দিকটি উন্মোচন করে।

“সাদ টাইগার” বইটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনা নয়, বরং সমাজে শিশুদের প্রতি হওয়া যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ।

নিগে সিনো তাঁর এই বইয়ের মাধ্যমে সেইসব ভুক্তভোগীদের কথা বলেছেন, যারা বছরের পর বছর ধরে এই ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারেন না।

বইটি লেখার বিষয়ে সিনো বলেন, “লজ্জা আমাদের কথা বলতে বাধা দেয়, কিন্তু আমার ভেতরের রাগ লজ্জাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল।

লেখার টেবিলে বসলে, যখন সৃষ্টি করার চেষ্টা করি, তখন আর ভয় থাকে না, হারানোরও কিছু থাকে না।

যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুদের জন্য সমাজে এখনো অনেক বাধা রয়েছে।

নিগে সিনোর এই বইটি সেই বাধাগুলো ভাঙতে এবং ভুক্তভোগীদের কথা বলতে উৎসাহিত করবে, এমনটাই প্রত্যাশা।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *