বদলে যাওয়া আমেরিকায়: রুজভেল্ট যা গড়েছিলেন, ট্রাম্প কি ভাঙছেন?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ডের তুলনা: রুজভেল্ট যা গড়েছিলেন, ট্রাম্প যা ভাঙতে চান।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দু’জন প্রেসিডেন্টের কাজের ধারা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একজন হলেন ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট (FDR), যিনি ‘নিউ ডিল’ কর্মসূচির মাধ্যমে আমেরিকার অর্থনীতিকে মহামন্দা থেকে টেনে তুলেছিলেন। অন্যজন হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি রুজভেল্টের নীতিগুলো মূলত উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

সম্প্রতি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এই দুই প্রেসিডেন্টের কাজের মধ্যেকার পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদনে, তাদের নীতি ও কর্মপদ্ধতির কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য প্রাসঙ্গিক।

রুজভেল্ট, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ও পরে, মোট চারবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, তিনি কার্যত সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিলেন। তার ‘নিউ ডিল’ কর্মসূচি ছিল সরকারি ব্যয়ের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, কর্মসংস্থান তৈরি করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

রুজভেল্ট কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেন, যা দেশকে সংকট থেকে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক সহজ করেন এবং মিত্রজোট তৈরি করেন।

অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের আকার ছোট করতে, সরকারি কর্মীদের ছাঁটাই করতে এবং সরকারি ব্যয়ের অপচয় চিহ্নিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্ব বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলোতেও পরিবর্তন আনতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

এই দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যেকার প্রধান পার্থক্যগুলো হলো তাদের নীতি ও কর্মপদ্ধতি। রুজভেল্ট কংগ্রেসের মাধ্যমে আইন তৈরি করে কাজ করতেন, যেখানে ট্রাম্প প্রায়ই নির্বাহী ক্ষমতা প্রদর্শনের ওপর নির্ভর করেছেন। রুজভেল্ট বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে একত্রিত করে একটি শক্তিশালী জোট তৈরি করেছিলেন, যা দীর্ঘদিন টিকে ছিল।

ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা মূলত ব্যক্তিগত, যা দীর্ঘমেয়াদে কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন আনবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রুজভেল্ট প্রশাসনের সময় শ্রমিক সংগঠনগুলোর অধিকার রক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে শ্রম আইন দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়।

রুজভেল্ট শুল্কনীতি সহজ করেছিলেন, কিন্তু ট্রাম্প সেই নীতির বিপরীত পথে হেঁটেছেন।

ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, রুজভেল্ট কার্যত জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য সবসময় সচেষ্ট ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করেছিলেন।

তার ‘ফায়ারসাইড চ্যাট’-এর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ধারণা ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়।

অন্যদিকে, ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সরাসরি জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তবে, রুজভেল্টের সময় রেডিওর মাধ্যমে যোগাযোগের ধারণা আজকের সামাজিক মাধ্যমের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল, কারণ তখন সকলে একই সময়ে একটি নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান শুনতেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রুজভেল্ট যে সময়ে ক্ষমতায় ছিলেন, সেই সময়ের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ট্রাম্পের সময়ের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। রুজভেল্ট একটি খারাপ অর্থনীতির মোকাবিলা করেছিলেন এবং তার নীতিগুলো দেশের জন্য ইতিবাচক ফল এনেছিল।

রুজভেল্টের সময়ে নেওয়া কিছু পদক্ষেপ, যেমন— সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আজও আমেরিকার সামাজিক কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অংশ। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে সেই সমস্ত নীতিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

সুতরাং, রুজভেল্টের নীতি ছিল জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা এবং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। অন্যদিকে, ট্রাম্পের নীতি ছিল বিদ্যমান কাঠামো পরিবর্তন করা এবং সরকারের ক্ষমতা হ্রাস করা। এই দুই প্রেসিডেন্টের কাজের ধারা বিশ্লেষণ করলে তাদের ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শন এবং দেশের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য স্পষ্ট হয়।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *