শীর্ষক: যুক্তরাজ্যের ‘গ্রুমিং গ্যাং’ কেলেঙ্কারি: নারী, শ্রেণী এবং ঘৃণার এক জটিল চিত্র
বিগত কয়েক দশক ধরে, যুক্তরাজ্যের কিছু অঞ্চলে কিশোরী মেয়েদের উপর সংঘটিত হওয়া যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনাগুলো কেবল কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না, বরং একটি সুসংগঠিত অপরাধ চক্রের অংশ ছিল, যা ‘গ্রুমিং গ্যাং’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
মূলত, সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মেয়ে শিশুদের টার্গেট করে তাদের যৌন নিপীড়ন করা হতো।
এই গ্যাংগুলির শিকার হওয়া মেয়েদের বেশিরভাগই ছিল শ্বেতাঙ্গ, এবং তাদের বেশিরভাগই ছিল শ্রমিক শ্রেণীর পরিবার থেকে আসা। অনেক ক্ষেত্রে, তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থাকা আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করত।
এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অপরাধীরা মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করত, তাদের মাদক ও মদের প্রতি আকৃষ্ট করত এবং এক পর্যায়ে যৌনকাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করত।
অভিযোগ আছে, কিছু ক্ষেত্রে, ট্যাক্সি চালকরা মেয়েদের গ্যাং সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিত, যার বিনিময়ে তারা অর্থ পেত অথবা নির্যাতনের সুযোগ পেত। এমনকি, এই কাজে আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মীদেরও নীরব থাকতে দেখা গেছে।
পুলিশ এবং সমাজকর্মীদের কাছ থেকেও অনেক সময় ভুক্তভোগীদের প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতার পরিবর্তে অবজ্ঞা প্রকাশ করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের তাদের জীবনযাত্রার জন্য দোষারোপ করা হয়েছে, এবং তাদের অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়নি।
এই ঘটনার পেছনে নিহিত কারণগুলো বহুস্তরবিশিষ্ট। একদিকে যেমন ছিল দারিদ্র্য ও সামাজিক বঞ্চনা, তেমনই ছিল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা। মেয়েদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের ফাঁদে ফেলা হতো।
সমাজের কিছু কুসংস্কারও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছিল। শ্বেতাঙ্গ মেয়েদের সঙ্গে ভিন্ন সম্প্রদায়ের পুরুষদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক সময় ভুল ধারণা ও ভীতি কাজ করত, যা অপরাধীদের উৎসাহিত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অপরাধ কেবল কোনো একটি জাতির মানুষের সমস্যা নয়, বরং এটি একটি গভীর সামাজিক ব্যাধি। এর পেছনে কাজ করে ক্ষমতা, শ্রেণী বৈষম্য এবং নারীর প্রতি বিদ্বেষ।
এই তিনটি বিষয় মিলিত হয়ে একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে, যেখানে দুর্বল নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বর্তমানে, এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে, ভুক্তভোগীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এখনো অনেক কাজ করা বাকি।
একইসঙ্গে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			