ট্রাম্পের শুল্ক: শোনা যায় এক, বাস্তবে অন্য!

শিরোনাম: ট্রাম্পের ‘পাল্টা’ শুল্ক: আসল চিত্রটা কি? বিশ্ব বাণিজ্যে এর প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি যে নতুন শুল্ক নীতি ঘোষণা করেছেন, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই শুল্ক ‘পাল্টা’— অর্থাৎ, অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে যে শুল্ক দেয়, সেই অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করবে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতির পেছনের হিসাবটা বেশ জটিল।

ট্রাম্পের এই নীতির মূল ভিত্তি হলো—অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি। তার প্রশাসন একটি সরলীকৃত হিসাব তৈরি করেছে, যেখানে বাণিজ্য ঘাটতি, বিদেশি বিনিয়োগ, এবং অন্যান্য দেশের কিছু নিয়মকানুনকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

এই হিসাবের মাধ্যমে, যুক্তরাষ্ট্র মূলত সেসব দেশকে লক্ষ্য করছে, যাদের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে।

তবে, সমালোচকরা বলছেন, এই পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ এবং এতে অনেক বিষয়কে উপেক্ষা করা হয়েছে। তারা মনে করেন, এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জটিলতাকে খাটো করে দেখায় এবং এর ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) গড় শুল্ক হার যেখানে ৫ শতাংশ, সেখানে ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে ২০ শতাংশের বেশি বলে উল্লেখ করেছে। কারণ হিসেবে তারা ইইউ-এর শুল্ক বিষয়ক কিছু নিয়ম এবং স্বচ্ছতার অভাবের কথা উল্লেখ করেছে।

অন্যদিকে, ভিয়েতনামের শুল্ক হার ৯.৪ শতাংশ হলেও, ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে ৪৬ শতাংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এর কারণ হিসেবে তারা ভিয়েতনামের কিছু বাণিজ্য-বহির্ভূত বাধা, যেমন—কোটা এবং অ্যান্টি-ডাম্পিং আইনকে দায়ী করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতি সবসময় খারাপ নয়। একটি দেশ অন্য দেশ থেকে বেশি পণ্য আমদানি করলে, সেই দেশে বাণিজ্য ঘাটতি হতে পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, দেশটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যদি একটি দোকান থেকে জিনিস কেনেন, তাহলে তার সেই দোকানের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হয়, কিন্তু তিনি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন না। কারণ, তিনি তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পাচ্ছেন।

এই শুল্ক নীতির ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। যদি অন্য দেশগুলোও এর প্রতিশোধ হিসেবে একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তাহলে বিশ্ব বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অর্থনীতি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে, যেখানে একদিকে কিছু দেশ এবং অন্যদিকে বাকি বিশ্ব থাকবে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই ধরনের নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিভিন্ন দেশের শুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য চুক্তিগুলো তাদের অর্থনীতিকে সরাসরি প্রভাবিত করে।

তাই, ট্রাম্পের এই নীতির প্রভাব এবং এর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *