নাসভিলের একটি বিদ্যালয়ে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হওয়া শিশুদের শোক এখনো কাটেনি।
গত বছর, মার্চ মাসের সেই ভয়াবহ দিনে, অড্রে হেল নামের ২৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, একটি প্রাইভেট স্কুলে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালায়। এই হামলায় তিনজন নয় বছর বয়সী শিশু এবং তিনজন কর্মী নিহত হয়।
ঘটনার তদন্তে জানা গেছে হামলাকারী দীর্ঘ সময় ধরে এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছিল।
তদন্তকারীরা বলছেন, অড্রে হেল দীর্ঘদিন ধরে তার মানসিক অসুস্থতা গোপন করে রেখেছিল। সে তার অভিভাবকদের এবং থেরাপিস্টদের কাছ থেকে তথ্য গোপন করত, যাতে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হয়।
হামলার আগে, সে অনলাইনে বন্দুক ও গোলাবারুদ কেনে এবং হামলার বিস্তারিত পরিকল্পনা করে। এমনকি সে কিভাবে তার অভিভাবকদের চোখে ধুলো দেবে, সে বিষয়েও ছক কষেছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, অড্রে হেল ছোটবেলা থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় জর্জরিত ছিল। সে শব্দ এবং মানুষের ভিড়-ভাট্টা দেখলে ভয় পেত।
তার মা-ও তার মধ্যে কিছু বিকাশে বিলম্ব লক্ষ্য করেছিলেন। পরে চিকিৎসকরা জানান, হেলের মধ্যে সামাজিক পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে সমস্যা ছিল, সেইসঙ্গে ছিল আবেগ নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা।
২০০৬ সালে, অড্রে হেল একটি বিশেষ স্কুলে ভর্তি হয়, যেখানে সে চিত্রকলার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। সেখানে সে কিছুটা সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয় এবং আত্ম-অনুভূতি কমে যায়।
পরে বাস্কেটবল দলে যোগ দিলেও, বন্ধুদের পরিবর্তন তার মন খারাপ করে দেয়। হাইস্কুলে যাওয়ার পর, সে আত্মহত্যা করার কথা ভাবতে শুরু করে।
২০১১ সালে, হেল-এর মা তাকে আবার থেরাপিস্টের কাছে নিয়ে যান। সেই সময়কার একটি মনোবৈজ্ঞানিক মূল্যায়নে জানা যায়, হেল গুরুতর হতাশায় ভুগছিল এবং তার মধ্যে উদ্বেগ ও ক্রোধের সমস্যা ছিল।
এরপর সে চিকিৎসা শুরু করে এবং কিছু সময়ের জন্য ওষুধ খেয়ে অবস্থার উন্নতি হয়।
কলেজে পড়ার সময়, হেল তার অতীতের বন্ধুদের থেকে দূরে ছিল এবং একাকীত্ব অনুভব করত। সে তার স্টাফ করা খেলনাগুলোর সাথে কথা বলত এবং তাদের সাথেই সময় কাটাত।
ধীরে ধীরে, তার হতাশা বাড়তে থাকে এবং সে অন্যদের উপর প্রতিশোধ নিতে চায়।
২০১৭ সাল থেকে, হেল স্কুল শুটিং এবং অন্যান্য হত্যাকান্ডের ঘটনা সম্পর্কে জানতে শুরু করে। সে ১৯৯৯ সালের কলোরাডোর কলম্বাইন হাই স্কুলে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
এই ঘটনার সাথে জড়িত এরিক হ্যারিস এবং ডিলান ক্লিবোল্ডকে সে তার আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে।
তদন্তে আরও প্রকাশ হয়েছে, হেল তার হামলার পরিকল্পনা গোপন রাখার জন্য অনেক কৌশল অবলম্বন করেছিল। সে থেরাপিস্টদের কাছ থেকে তথ্য গোপন করত, ওয়েব ব্রাউজিংয়ের ইতিহাস মুছে ফেলত এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুকিয়ে রাখত।
তদন্তকারীরা বলছেন, হেল ছিল খুবই চালাক এবং অন্যদের বোকা বানাতে পারদর্শী ছিল।
নাসভিলের এই ঘটনার পর, নিহত শিশুদের পরিবারের সদস্যরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এই ঘটনার ফলে তাদের জীবনে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কখনোই পূরণ হবার নয়।
তারা চান, ভবিষ্যতে আর কোনো পরিবার যেন এমন দুঃখের শিকার না হয়।
এই ঘটনার তদন্তের সময়, হেলের লেখা কিছু ব্যক্তিগত ডায়েরি এবং কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো প্রকাশ করা হবে কিনা, তা নিয়ে আদালতে বিতর্ক চলছে।
নিহতদের পরিবারের সদস্যরা চান, সেগুলো প্রকাশ না করা হোক, কারণ এতে তাদের মানসিক কষ্ট আরও বাড়বে।
তথ্য সূত্র: CNN