সিয়েরা লিওনে ‘কুশ’ নামক একটি শক্তিশালী সিনথেটিক মাদকদ্রব্যের বিস্তার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির সরকার মাদকটির বিরুদ্ধে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেও, সমাজের একটি বড় অংশ—বিশেষ করে নারীরা— এখনো পর্যন্ত এই সংকট থেকে মুক্তি পায়নি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা যায়, মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপগুলো মূলত দুর্বল এবং পর্যাপ্ত সহায়তা এখনো অধরাই রয়ে গেছে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউনের একটি বিশাল ময়লার স্তূপের কাছেই বসবাস করেন জয়নব। কুশ সেবনের জন্য পরিচিত এই নারীর জীবন সংগ্রামের এক করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।
জয়নব জানান, কুশ-এর নেশা তাকে এতটাই গ্রাস করেছে যে এটি ছাড়া তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাদক কেনার খরচ জোগাতে তিনি বেছে নিয়েছেন যৌনকর্মের পথ।
সিয়েরা লিওনের নারীদের জীবনে কুশের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সামাজিক প্রতিকূলতা, দারিদ্র্য এবং কুসংস্কারের কারণে অনেক নারীই সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মাদকাসক্ত নারীদের মধ্যে মাত্র ১ জনের চিকিৎসা হয়, যেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৭ জনের মধ্যে ১ জন।
কুশের বিস্তার রোধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও, পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে নারীদের উপস্থিতি এখনো কম। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসা রোগীদের মধ্যে মাত্র ৪০ জন নারী।
মাদকাসক্তির কারণে নারীরা প্রায়ই সহিংসতার শিকার হন, অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়।
ফ্রিটাউনের একটি মানসিক হাসপাতালে কর্মরত নার্স জানিয়েছেন, কুশ সেবনের কারণে নারীরা তাদের শরীর বিক্রি করতে বাধ্য হন। কুশের কারণে অনেকে তাদের ভবিষ্যৎ হারিয়ে ফেলছেন।
এই মাদক সেবনের ফলে লিভার, কিডনি এবং শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুশের সহজলভ্যতা, কম দাম এবং এর অজানা উপাদানগুলো এই মাদক সমস্যার সমাধানে বড় বাধা। মাদকটি মোকাবিলায় দুর্বল অবকাঠামো এবং প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবও একটি বড় সমস্যা।
মাদক নির্মূলে বিভিন্ন এনজিও কাজ করলেও, তাদের কার্যক্রম পর্যাপ্ত নয়।
স্থানীয় একটি এনজিও’র কর্মী খাদিজা লানসানা জানান, মাদকাসক্ত নারীরা প্রায়ই সহিংসতার শিকার হন। মাদক গ্রহণের পর নারীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পুরুষরা তাদের ওপর যৌন নির্যাতন চালায়।
কুশের বিরুদ্ধে লড়াই কঠিন হলেও, এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নারীদের পাশে দাঁড়ানোটা জরুরি। সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাদকাসক্ত নারীদের জন্য উপযুক্ত পুনর্বাসন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।
তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পরিবার ও সমাজের সমর্থন অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা