সেন্ট কার্লোর দেহাবশেষ নিলাম: শয়তানের কাজ?

যুব প্রজন্মের মধ্যে ধর্মপ্রাণ জীবনযাপনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, কার্লো অ্যাকুটিস। এই তরুণ খুব শীঘ্রই ক্যাথলিক চার্চের একজন সন্ত (saint) হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছেন, যাঁর জীবনযাত্রা বহু মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা।

তবে তাঁর ব্যবহৃত কিছু জিনিস অনলাইনে নিলামে তোলার চেষ্টা ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ইতালির একজন আর্চবিশপ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং এর পেছনে শয়তানের হাত আছে বলেও মনে করছেন।

জানা গেছে, কার্লো অ্যাকুটিসের কিছু চুল অনলাইনে নিলামে তোলার চেষ্টা করা হয়। নিলামে এটির দাম ২,২০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল।

খবরটি প্রকাশ্যে আসার পরেই, আসিসির আর্চবিশপ ডোমেনিকো সোরেন্টিনো (Archbishop Domenico Sorrentino) দ্রুত পদক্ষেপ নেন। উল্লেখ্য, আসিসি শহরেই কার্লো অ্যাকুটিসের মরদেহ সমাধিস্থ করা হয়েছে।

আর্চবিশপ সোরেন্টিনো এই নিলামের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।

ক্যাথলিক চার্চের নিয়ম অনুযায়ী, সন্তদের ব্যবহৃত জিনিস বা ‘রিলিক’ (relic) – যেমন চুল বা হাড়ের টুকরো – পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হয় এবং তা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়।

এই ধরনের জিনিস বিক্রি করা আইনত নিষিদ্ধ। সাধারণত, এগুলো দান করা যেতে পারে, অথবা বিশপরা (bishops) দিতে পারেন।

তবে গুরুত্বপূর্ণ ‘রিলিক’ – যেমন হৃদপিণ্ড বা শরীরের কোনো অঙ্গ – ভ্যাটিকানের অনুমতি ছাড়া দেওয়া যায় না।

আর্চবিশপ সোরেন্টিনো তাঁর এক ভিডিও বার্তায় জানান, কোনো আর্থিক লাভের উদ্দেশ্যে এগুলো বিক্রি করা সম্পূর্ণভাবে অনুচিত।

আর্চবিশপ সোরেন্টিনো আরও বলেন, “আমরা ইন্টারনেটে নিলামের বিষয়টি যাচাই করার পরেই অভিযোগ দায়ের করেছি।

টাকার প্রতি মোহ মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে! আমার মনে হয়, এর পেছনে শয়তানের হাত রয়েছে।”

পেরুজিয়া শহরের পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

আর্চবিশপ জানিয়েছেন, “আমরা ‘রিলিক’গুলো বাজেয়াপ্ত করার আবেদন জানিয়েছি।

আসল নাকি নকল, তা আমরা জানি না, তবে প্রতারণা করা হলে, তা শুধু একটি জালিয়াতি নয়, বরং ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি চরম অবমাননা হবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “রিলিক ব্যবসার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাধু-সন্ন্যাসীর ‘রিলিক’-এর বাজার তৈরি হয়েছে, যেখানে মূল্যের তালিকাও দেওয়া আছে।

এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”

কার্লো অ্যাকুটিস ২০০৬ সালে ১৫ বছর বয়সে লিউকেমিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

অল্প বয়সেই তিনি প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়ার এক নতুন পথ তৈরি করেছিলেন।

তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আর্চবিশপ সোরেন্টিনো মনে করেন, কার্লো অ্যাকুটিস সম্ভবত ‘ইন্টারনেটের পৃষ্ঠপোষক সন্ত’ (patron saint of the internet) হবেন।

আগামী ২৭ এপ্রিল ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে তাঁর সন্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা অনুষ্ঠিত হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *