মার্কিন-ইরান উত্তেজনা: রেকর্ড পতনে ইরানের মুদ্রা, বাড়ছে উদ্বেগ!

ইরানের মুদ্রা রিয়ালের দর মার্কিন ডলারের বিপরীতে আবারও রেকর্ড পতনে পৌঁছেছে, যা তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আরও একটি বহিঃপ্রকাশ। দেশটির অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যেকার বিরোধের জেরে এই দরপতন ঘটছে।

ফার্সি নববর্ষ ‘নওরোজ’-এর উৎসবের সময় যখন মুদ্রা দোকানগুলো বন্ধ ছিল, তখন কালোবাজারে লেনদেন হওয়ায় রিয়ালের দর আরও কমে যায়। শনিবার দোকানগুলো পুনরায় খোলার পর, প্রতি ডলারের বিপরীতে রিয়ালের দর ১,০৪৩,০০০-এর নিচে নেমে আসে।

অনেক ব্যবসায়ী দর আরও কমার আশঙ্কায় তাদের ইলেকট্রনিক সাইনবোর্ড বন্ধ করে দেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের অর্থনীতির ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে, ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিলে এই সংকট আরও বাড়ে।

ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের অংশ হিসেবে নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল করেন এবং ইরানের অপরিশোধিত তেল বিক্রি বন্ধ করতে উদ্যেগ নেন, যা চীনের বাজারেও কম দামে বিক্রি হচ্ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। যদিও তেহরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং তারা তাদের পারমাণবিক কার্যক্রমকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে।

২০১৫ সালে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলো এবং জার্মানির সঙ্গে ইরানের একটি চুক্তি হয়েছিল, যেখানে দেশটির পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়। কিন্তু ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন, যার ফলশ্রুতিতে ইরান তাদের চুক্তির শর্তগুলি ধীরে ধীরে লঙ্ঘন করতে শুরু করে এবং পারমাণবিক কর্মসূচি জোরদার করে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সম্প্রতি বলেছেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে সরাসরি আলোচনার বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।

একইসাথে, দেশটির শীর্ষ নেতার উপদেষ্টা আলী লারিজানি সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের উপর যদি কোনো ধরণের হামলা হয়, তবে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যেকার এই উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর প্রভাব পড়তে পারে, যার মধ্যে বাংলাদেশের মতো দেশও অন্তর্ভুক্ত।

মুদ্রা বিনিময় হার, তেলের দাম এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য—এসব ক্ষেত্রে অস্থিরতা দেখা যেতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *