নির্বাচনে ‘রক্তাক্ত’ পরিস্থিতির হুঁশিয়ারি, ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে ক্রুজের চাঞ্চল্যকর মন্তব্য!

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন টেক্সাসের প্রভাবশালী সিনেটর টেড ক্রুজ। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদানি শুল্ক (ট্যারিফ) নীতির কারণে যদি মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়, তবে এই বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

সিনেটর ক্রুজের মতে, এমনটা ঘটলে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান দল বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

সিনেটর ক্রুজ সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি বহাল থাকলে এবং এর ফলস্বরূপ অন্যান্য দেশগুলো পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে, তা বাণিজ্য যুদ্ধ ডেকে আনতে পারে। এই বাণিজ্য যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে এবং দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান হ্রাস করতে পারে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শুল্ক নীতি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে তা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।

সিনেটর ক্রুজ তার ‘ভারডিক্ট’ নামক পডকাস্টে দেওয়া বক্তব্যে এই উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, “একশ বছর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখনকার মতো প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রাখত না। তবে আমি উদ্বিগ্ন, কারণ প্রশাসনের ভেতরে এমন কিছু কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে যারা চায় এই শুল্কগুলো চিরকাল বজায় থাকুক।”

এদিকে, আইওয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান সিনেটর চাক গ্রাসলি এরই মধ্যে একটি দ্বিদলীয় বিল উত্থাপন করেছেন। এই বিলের মাধ্যমে বাণিজ্য নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

ডেমোক্রেট সিনেটর মারিয়া কান্টওয়েলও এই বিলের সহ-পৃষ্ঠপোষক। এই বিলটি মূলত বাণিজ্য নীতি নির্ধারণে কংগ্রেসের ভূমিকা পুনর্বহাল করার কথা বলছে।

এছাড়াও, রিপাবলিকান সিনেটর লিসা মুরকোওস্কি, মিচ ম্যাককনেল, জেরি মোরান এবং থম টিলিসও এই বিলে সমর্থন জুগিয়েছেন। যদিও এই বিলটিকে নিছক প্রতীকী হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবুও এটি ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে সৃষ্ট উদ্বেগের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে ৫.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি মূলধন কমে যাওয়া এবং উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের একটি সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনে ট্রাম্প সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয় – এই বিষয়গুলো আসন্ন নির্বাচনের ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে সিনেটর ক্রুজ মনে করেন, যদি শুল্ক এবং বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে দীর্ঘমেয়াদে মন্দা দেখা দেয়, বিশেষ করে ২০২৬ সালের মধ্যে, তাহলে রিপাবলিকানদের জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এমনটা ঘটলে ডেমোক্রেটরা কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে।

সিনেটর ক্রুজ আরও বলেন, যদি মন্দা চলতে থাকে এবং মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করবে।

তবে তিনি শুল্ক আরোপের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির ধারণা সমর্থন করেন না।

সিনেটর ক্রুজ অবশ্য মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতি সফল হোক, তিনি সেটাই চান। তার মতে, সফলতার অর্থ হলো— বাইরের দেশগুলোতে শুল্কের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা এবং এর ফলে এখানেও শুল্ক কমানো।

তার ভাষায়, “এটাই আমেরিকান শ্রমিক, ব্যবসা এবং অর্থনীতির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে।”

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *