স্পেনের বিভিন্ন শহরে সম্প্রতি কয়েক লক্ষ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভের মূল কারণ হলো, সেখানে বাড়ি ভাড়া আকাশছোঁয়া এবং সাশ্রয়ী মূল্যে বাসস্থানের অভাব। একদিকে যখন দেশটির অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে, পর্যটকদের আনাগোনাও বাড়ছে, ঠিক তখনই দেখা যাচ্ছে আবাসন সংকট তীব্র হচ্ছে।
খবর অনুযায়ী, এই পরিস্থিতিতে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নাভিশ্বাস উঠেছে।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় স্পেনে আবাসন সংকট বিশেষভাবে গুরুতর রূপ নিয়েছে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেখানে বাড়ির মালিকানার একটা শক্তিশালী ঐতিহ্য রয়েছে, কিন্তু ভাড়া বাড়ির সংখ্যা খুবই কম।
তাছাড়া, পর্যটন শিল্পের প্রসারের কারণে স্বল্পমেয়াদী ভাড়ার চাহিদা বেড়েছে, যা সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। রাজধানী মাদ্রিদসহ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদকারীরা তাদের অধিকারের দাবিতে সরব হয়েছেন। তারা বলছেন সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেন আবাসন অধিকারের বিষয়টি উপেক্ষিত না হয়।
তথ্য বলছে, গত এক দশকে স্পেনে বাড়ি ভাড়া দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। একই সময়ে বাড়ির দাম বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, ২০২০ সালের পর থেকে ভাড়ার জন্য উপলব্ধ বাড়ির সংখ্যা অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। যদিও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে সরকারি উদ্যোগে ভাড়ার বাড়ি তৈরি করা হয়, স্পেনে সেই ধরনের সরকারি আবাসন ব্যবস্থা খুবই দুর্বল।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) দেশগুলোর মধ্যে স্পেনের অবস্থান তলানিতে। সেখানে ভাড়ার জন্য সরকারি আবাসনের পরিমাণ মোট আবাসনের ২ শতাংশেরও কম। যেখানে ফ্রান্সের এই হার ১৪ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ১৬ শতাংশ এবং নেদারল্যান্ডসের ৩৪ শতাংশ।
পর্যটন শিল্পের বিকাশের ফলে স্বল্পমেয়াদে ভাড়ার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা মার্গারিটা আইজপুরু সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানান, তার এলাকার প্রায় একশ পরিবারের ভাড়া চুক্তি নবায়ন করা হয়নি।
কারণ বাড়ির মালিকরা এখন পর্যটকদের কাছে তাদের ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে বেশি আগ্রহী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যমান নিয়মগুলি দীর্ঘমেয়াদে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে বাড়িওয়ালাদের কাছে পর্যটকদের স্বল্পমেয়াদী ভাড়া দেওয়াটাই লাভজনক মনে হয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে স্পেনে রেকর্ড ৯ কোটি ৪০ লক্ষ পর্যটকের আগমন ঘটেছে, যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
সরকারি তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর স্পেনে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে, যা ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের আগের তুলনায় অনেক কম এবং আবাসনের সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা