গ্যাস্ট্রোনমির শহর: থেসালোনিকি-র অজানা গল্প!

Thessaloniki: গ্রিসের এক রন্ধন-ঐতিহ্যের শহর।

ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত থেসালোনিকি, গ্রিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, যা শুধু তার ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য নয়, বরং খাদ্যরসিকদের কাছেও এক অসাধারণ গন্তব্য হিসেবে সুপরিচিত। এই শহরটি ২০১৬ সাল থেকে ইউনেস্কো সিটি অফ গ্যাস্ট্রোনমি’র স্বীকৃতি লাভ করেছে, যা এর সমৃদ্ধ রন্ধন ঐতিহ্যের প্রমাণ।

বহু সংস্কৃতির সংমিশ্রণে গঠিত এই শহরের খাদ্য সংস্কৃতিতে বিভিন্ন সাম্রাজ্যের—ম্যাসেডোনিয়ান, রোমান, বাইজেন্টাইন এবং অটোমান—ছাপ স্পষ্ট।

শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত কাপানি বাজার, যেন এক ভিন্ন জগৎ। এখানে স্থানীয় মানুষের আনাগোনা সবসময় লেগে থাকে।

বাজারের সরু পথগুলোতে নানান পসরা সাজিয়ে বসে ব্যবসায়ীরা। সবজির স্তূপ, টাটকা মাছ, আর মশলার গন্ধে বাজারটি সবসময় মুখরিত থাকে।

এই বাজারের পরিবেশ অনেকটা বাংলাদেশের পুরোনো ঢাকার বাজারের মতো, যেখানে হাঁকডাক আর দর কষাকষির মধ্যে চলে বেচাকেনা।

থেসালোনিকির প্রাতরাশের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ‘বোগাৎসা’। এটি এক ধরনের ক্রিমি কাস্টার্ড দিয়ে তৈরি, যার উপর হালকা চিনি ছিটিয়ে পরিবেশন করা হয়।

বোগাৎসা বানানোর জন্য শহরের একটি জনপ্রিয় বেকারি ‘বোগাৎসা বান্টিস’। এখানকার কর্মীরা হাতে তৈরি করে এই সুস্বাদু খাবারটি।

ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে হলে আপনাকে যেতে হবে ‘আনো পলি’ অঞ্চলে। এখানকার সরু পথগুলি পাহাড়ের গা বেয়ে উঠেছে, আর রাস্তার দু’পাশে পুরনো বাড়িগুলো যেন এক অন্যরকম দৃশ্য তৈরি করে।

এখানকার ‘টসিনারি’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট স্থানীয়দের কাছে খুবই প্রিয়। এখানে পরিবেশিত হয় ছোট ছোট পদের খাবার, যা বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে খাওয়ার মজাই আলাদা।

অনেকটা আমাদের দেশের চটপটির মতো, যেখানে সবাই মিলে একসঙ্গে উপভোগ করা যায়।

থেসালোনিকির সংস্কৃতি শুধু খাদ্যরসিকদের জন্যই নয়, বরং যারা রাতের জীবন উপভোগ করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্যও আকর্ষণীয়।

‘লাদাদিকা’ এলাকার নাইটলাইফ খুবই বিখ্যাত। এখানে রাস্তার ধারে ক্যাফে ও বারে বসে স্থানীয় ও পর্যটকদের আড্ডা চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

এখানকার একটি জনপ্রিয় পানশালা ‘প্রিগিপেস্সা’য় প্রায়ই স্থানীয় শিল্পীরা লাইভ সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

থেসালোনিকির সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং খাবারের এই মিশ্রণ শহরটিকে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছে। এখানকার মানুষ তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ভালোবাসে এবং তা ধরে রাখতে চায়।

এখানকার খাবারগুলো শুধু জিভে জল আনা স্বাদের জন্যই নয়, বরং এটি তাদের সংস্কৃতিরও একটি অংশ।

তাই, যারা নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য থেসালোনিকি হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *