যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং এলন মাস্কের নীতির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের প্রস্তুতি চলছে। আগামী শনিবার, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এক হাজার চারশটিরও বেশি স্থানে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
গণতন্ত্রপন্থী একটি সংগঠনের ডাকে এই আন্দোলনের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে আয়োজকরা এটিকে ‘ক্ষমতা দখলের চেষ্টা’ এবং আমেরিকান অধিকার ও স্বাধীনতার উপর আঘাত হিসেবে দেখছেন।
“হ্যান্ডস অফ!” নামের এই বিশাল বিক্ষোভ কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যের রাজধানী, ফেডারেল ভবন, কংগ্রেসের কার্যালয়, সোশ্যাল সিকিউরিটির সদর দপ্তর, পার্ক ও সিটি হলগুলোতে অনুষ্ঠিত হবে। বিক্ষোভের আয়োজকদের ভাষ্যমতে, তারা এমন সব স্থানে প্রতিবাদ জানাতে চান, যেখানে তাদের কথা শোনা যাবে।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, যারা গণতন্ত্রের উপর আঘাত, চাকরি ছাঁটাই, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন অথবা সরকারি পরিষেবা হ্রাসের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত, তাদের সবার জন্যই এই আন্দোলন।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিতে এরই মধ্যে প্রায় ছয় লাখ মানুষ নাম লিখিয়েছেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিভিল রাইটস সংস্থা, ভেটেরান, নারী অধিকার সংগঠন, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং এলজিবিটিকিউ+ অধিকারকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় জোটের সহযোগিতায় ‘ইনডিভিজিবল’ নামের একটি সংগঠন এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বিক্ষোভকারীদের প্রধান তিনটি দাবি হলো: ট্রাম্প প্রশাসনের ‘বিলিয়নেয়ারদের ক্ষমতা গ্রহণ ও দুর্নীতি’ বন্ধ করা, মেডিকাইড, সোশ্যাল সিকিউরিটি এবং শ্রমিক শ্রেণির উপর নির্ভরশীল অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের অর্থ হ্রাস বন্ধ করা এবং অভিবাসী ও ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ বন্ধ করা।
জানা গেছে, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সরকারি ব্যয় কমানোর বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।
ট্রাম্প ও মাস্কের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সরকারি ব্যয় কমাতে এবং ফেডারেল সরকারের আকার ছোট করতে হাজার হাজার কর্মীকে হয় চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, না হয় তাদের তাৎক্ষণিক বরখাস্তের নোটিশ ধরানো হয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী এলন মাস্ক, যিনি তথাকথিত ‘গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি ডিপার্টমেন্ট’-এর প্রধান হিসেবে সরকারি ব্যয় হ্রাস করার নীতি জোরালোভাবে সমর্থন করেছেন। এমনকি তিনি ফেডারেল ব্যয়ের বিষয়ে জনসাধারণের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তিনি একবার মন্তব্য করেছিলেন, ইউএসএআইডি (USAID) – এর মতো একটি সংস্থাকে, যা বিশ্বের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের খাদ্য সরবরাহ করে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, ‘কাঠের গুঁড়ো করার মেশিনে’ (wood chipper) দিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি সাহায্য কর্মসূচিগুলো বাতিল করেছে, যা বিদেশে দুর্বল গণতন্ত্রগুলোকে সহায়তা করে। এছাড়াও, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন রক্ষার দায়িত্বে থাকা ফেডারেল কর্মীদের ছুটিতে পাঠিয়েছে।
প্রতিবাদকারীরা আরও বলেন, “আমাদের সমাজ এর মূল্য দিচ্ছে, আর ট্রাম্প ও মাস্কের মতো ব্যক্তিরা ফায়দা লুটছেন। এটি শুধু অর্থের বিষয় নয়, ক্ষমতারও বিষয়।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন