আতঙ্ক! ইকুয়েডরে নিরাপত্তা অভিযানে এরিক প্রিন্স, চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!

ইকুয়েডরে মাদক দমনের মিশনে কুখ্যাত ব্ল্যাকওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা এরিক প্রিন্স।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে মাদক চোরাচালান বিরোধী অভিযানে নেমেছেন বিতর্কিত নিরাপত্তা ঠিকাদার ব্ল্যাকওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা এরিক প্রিন্স। দেশটির সবচেয়ে সহিংস শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম গুয়াকুইলে শনিবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযানে অংশ নেন তিনি। দেশটির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই খবর জানা গেছে।

ইকুয়েডরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জন রেইমবার্গের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই অভিযানে ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে এবং ১০টি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “শনিবার সকালে নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এরিক প্রিন্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিয়ান কার্লো লফ্রেডো এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জন রেইমবার্গ গুয়াকুইলের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে শহরতলিতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম জোরদার করতে কৌশল তৈরি করেন।”

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে এরিক প্রিন্স বলেছেন, তিনি “মাদক গ্যাংগুলির বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সামরিক বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং কৌশল সরবরাহ করছেন।” তার লক্ষ্য হলো, “মাদক ব্যবসায়ীদের কোণঠাসা করে তাদের ভীত করে তোলা।”

জানা গেছে, কয়েক সপ্তাহ আগে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া মাদক অপরাধ দমনের জন্য এরিক প্রিন্সের সঙ্গে একটি “কৌশলগত জোট” ঘোষণা করেন। ইকুয়েডরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রিন্সের এই অংশগ্রহন কে “নিরাপত্তার জন্য একটি ঐতিহাসিক অধ্যায়” হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিয়ান কার্লো লফ্রেডো জানিয়েছেন, প্রিন্স ও তার দল বর্তমানে ইকুয়েডরের নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের কাজের পরিধি আরও বাড়ানো হতে পারে। তিনি আরও জানান, প্রিন্স কয়েক দিন ধরে ইকুয়েডরে অবস্থান করছেন এবং দেশটির গ্যাংগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, কোকেন উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশ কলম্বিয়া ও পেরুর মাঝে অবস্থিত ইকুয়েডর বর্তমানে মাদক ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর ফলস্বরূপ দেশটিতে সহিংসতাও বেড়েছে। মাদক পাচারকারীরা তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর ও পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। মাদক দ্রব্যগুলি সাধারণত কলার বাক্সের ভেতর লুকিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে পাঠানো হয়।

প্রেসিডেন্ট নোবোয়া মাদক গ্যাংগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিদেশি সাহায্য চেয়েছেন এবং স্থানীয় গ্যাংগুলিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি, ইকুয়েডর সরকার মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা গেছে। তবে, প্রেসিডেন্ট নোবোয়ার এই প্রচেষ্টা আগামী সপ্তাহের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কতটা সফল হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থী প্রার্থী লুইসা গঞ্জালেজও মাদক দমনের বিষয়ে কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে তিনি বিদেশি শক্তির উপস্থিতির বিরোধী।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভিডিওতে প্রিন্স ইকুয়েডরবাসীকে প্রেসিডেন্ট নোবোয়ার প্রতি সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায়, দেশটি “ভেনেজুয়েলার মতো একটি মাদক রাষ্ট্রে পরিণত হবে, যেখানে ব্যাপক মাদক উৎপাদন, অপরাধ, সমাজতন্ত্র এবং হতাশা বিরাজ করবে।” তিনি আরও বলেন, “আমি আশা করি ইকুয়েডর আইন ও শৃঙ্খলা বেছে নেবে এবং আমরা গ্যাংগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং সরকারের আইন-শৃঙ্খলা, শান্তি ও সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে এখানে এসেছি।”

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *