একটি আন্তর্জাতিক খ্রিস্টান মিশনারী সংস্থা, ইয়ুথ উইথ আ মিশন (YWAM), তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তরুণদের উপর মানসিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই সংগঠনের প্রাক্তন সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের প্রকাশ্যে অপমান করা হয়েছে, “সমকামিতা নিরাময়ের” নামে আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে বাধ্য করা হয়েছে এবং যারা সংগঠন ত্যাগ করতে চেয়েছেন, তাদের বলা হয়েছে যে এটি ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
এই অভিযোগগুলো গত দুই দশক ধরে আসা এবং বিশ্বজুড়ে YWAM-এর বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘটেছে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও সুইজারল্যান্ড অন্যতম।
অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, YWAM-এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে তরুণ-তরুণীদের নিয়মিত “পাপ” স্বীকার করতে বাধ্য করা হতো। তাদের মধ্যে “পাপ” হিসেবে বিবেচিত হত—সমকামী চিন্তা, যৌন কার্যকলাপ, গর্ভপাত এবং পর্নোগ্রাফি দেখা।
এছাড়া, নেতাদের অবাধ্য হওয়া বা “বিদ্রোহাত্মক” চিন্তা করাকেও পাপ হিসেবে গণ্য করা হতো। যারা তাদের “পাপ” স্বীকার করতেন, তাদের প্রশ্ন করা হতো এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হত।
এমনকি, তাদের স্বেচ্ছাসেবক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হত। কিছু ক্ষেত্রে, পরিস্থিতি আরও গুরুতর ছিল। প্রাক্তন YWAM স্বেচ্ছাসেবকরা জানিয়েছেন, বিবাহ-বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক স্থাপনকারীদের মধ্যে থেকে “শয়তান তাড়ানোর” মতো আচার-অনুষ্ঠানও করা হতো।
সংগঠনটির প্রাক্তন সদস্যরা আরও অভিযোগ করেছেন, কিছু ক্ষেত্রে সম্পর্ক, পোশাক এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হতো।
নেতাদের দেওয়া নির্দেশ প্রায়ই ঈশ্বরের বাণী হিসেবে প্রচার করা হত। একজন প্রাক্তন মিশনারি বলেছেন, “তারা প্রায়ই অন্যদের ইচ্ছাকে নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করত, এই বলে যে ‘আমার মনে হয় ঈশ্বর এটা বলছেন’। এটি ছিল মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি কৌশল।”
YWAM বর্তমানে প্রায় ১৮০টি দেশে কাজ করে এবং প্রতি বছর প্রায় ২৫,০০০ তরুণ-তরুণীকে স্বল্প-মেয়াদী মিশনে পাঠায়।
১৯৬০ সালে আমেরিকান মিশনারি লরেন কানিংহাম এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থাটির প্রধান কেন্দ্রগুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যে।
যুক্তরাজ্যে এটি একটি নিবন্ধিত দাতব্য সংস্থা।
অভিযোগের বিষয়ে YWAM-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা এসব অভিযোগের বিষয়ে অবগত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা ও কল্যাণে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তারা তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। YWAM-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাদের সংস্থায় যৌনতা এবং বিবাহের বিষয়ে সনাতন খ্রিস্টান দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তবে তারা কীভাবে এই বিশ্বাসগুলো প্রকাশ করে, তা পর্যালোচনা করছে।
তাদের মতে, তারা এমন কোনো কার্যক্রম সমর্থন করে না, যা মানুষকে মানসিক আঘাত দেয় অথবা তাদের পরিচয়কে শয়তানের প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত করে।
সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যে YWAM-এর সঙ্গে যুক্ত একটি প্রার্থনা আন্দোলন শুরু হয়েছে, যার লক্ষ্য হলো তরুণ খ্রিস্টান মিশনারি তৈরি করা।
“দ্য সেন্ড ইউকে অ্যান্ড আয়ারল্যান্ড” নামক এই উদ্যোগটি একটি জোটবদ্ধ খ্রিস্টান গ্রুপের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, YWAM-এর সংস্কৃতি এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সমালোচকদের মতে, বিকেন্দ্রীভূত কাঠামোর কারণে পর্যাপ্ত তদারকির অভাব রয়েছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান