গাজায় নতুন নিরাপত্তা করিডোর স্থাপন করলো ইসরায়েলি সেনা: সংকট আরও গভীর
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দক্ষিণে একটি নতুন নিরাপত্তা করিডোর স্থাপন করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই ঘোষণা আসে। গাজায় হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে চাপ আরও বাড়াতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বুধবার নতুন ‘মোরাগ করিডোর’-এর ঘোষণা দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই করিডোর গাজার রাফাহ শহরকে উপত্যকার বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে।
একসময় রাফাহ ও খান ইউনিসের মাঝে ‘মোরাগ’ নামে একটি ইহুদি বসতি ছিল। নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই করিডোরটি সম্ভবত রাফাহ ও খান ইউনিসের মধ্যে দিয়ে যাবে।
প্রকাশিত কিছু মানচিত্রে দেখা গেছে, করিডোরটি গাজার সংকীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলের পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত। নেতানিয়াহু একে ‘দ্বিতীয় ফিলাডেলফি করিডোর’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
ফিলাডেলফি করিডোর হলো গাজার সঙ্গে মিশরের সীমান্ত এলাকার একটি অংশ, যা গত মে মাস থেকে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গত মাসে, হামাসকে যুদ্ধবিরতির নতুন শর্ত মানতে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করে ইসরায়েল। এর পরেই তারা গাজায় আকস্মিকভাবে বোমা হামলা চালায় এবং যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেয়।
এতে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
গাজার উত্তরাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা, যার মধ্যে গাজা শহরও রয়েছে, সেটিকে উপত্যকার বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেটজারি করিডোর ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ফিলাডেলফি ও নেটজারি করিডোর দুটি ইসরায়েল সীমান্ত থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
নেতানিয়াহু বুধবার বলেছিলেন, “আমরা গাজা উপত্যকাকে বিভক্ত করছি এবং ধীরে ধীরে চাপ বাড়াচ্ছি, যাতে তারা আমাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে দেয়।” তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ইসরায়েল গাজার বিশাল এলাকা দখল করে নিজেদের নিরাপত্তা জোনের অন্তর্ভুক্ত করবে।
শনিবারের এই ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আবারও বৈঠক করবেন নেতানিয়াহু। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার তাদের মধ্যে বৈঠক হতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের সঙ্গে মিলে যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যস্থতা করছে, তবে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর সিদ্ধান্তের প্রতিও সমর্থন জানিয়েছে।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে আগের বৈঠকের পর ট্রাম্প গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ওই অঞ্চলের বাইরে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেন এবং এলাকাটির পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অংশীদারিত্বের’ প্রস্তাব করেন।
ফিলিস্তিনি, আরব দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস যদি গত ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর হামলায় নিহতদের মরদেহ ও জিম্মিদের ফিরিয়ে না দেয়, অস্ত্র সমর্পণ এবং গাজা ত্যাগ করতে রাজি না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।
হামাস যোদ্ধারা এখনো ৫৯ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি নয়। তাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলের সৈন্য প্রত্যাহার চায়।
গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক।
এছাড়াও প্রায় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং অন্যান্য সমঝোতার মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সময় ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা প্রায় ২০,০০০ যোদ্ধা নিধন করেছে, তবে এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি।
গাজায় নিহতদের মধ্যে গত মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত ১৫ জন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মীও রয়েছেন।
তাঁদের মরদেহ ও ধ্বংস হওয়া গাড়ির ওপর বুলডোজার চালিয়ে গণকবর দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই যুদ্ধ সবচেয়ে ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক। এতে গাজার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেখানকার অধিবাসীদের অনেকেই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
জিম্মিদের পরিবারগুলো তাঁদের স্বজনদের জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য যুদ্ধবিরতির আবেদন জানিয়েছেন। এক জিম্মির পরিবারের সদস্য এফ্রাত মাচিকাবা বলেছেন, “নেতানিয়াহু জিম্মিদের জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে তাঁদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।