মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টেসলা শোরুমে বিক্ষোভ অব্যাহত, ইলন মাস্ক কি DOGE থেকে সরে যাচ্ছেন?
যুক্তরাষ্ট্রে টেসলার শোরুমগুলোতে বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, যেখানে প্রতিবাদকারীরা টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন। তাদের মূল অভিযোগ হলো, সরকারি দপ্তর ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (DOGE)-তে মাস্কের ব্যয় সংকোচনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।
এই বিক্ষোভের ঢেউ লেগেছে বিভিন্ন রাজ্যে। জানা গেছে, শনিবার দেশজুড়ে ৬০টির বেশি এবং রবিবার এক ডজনের বেশি টেসলা শোরুমে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
‘টেসলা টেকডাউন’ নামক একটি আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই বিক্ষোভগুলো সংগঠিত হচ্ছে। এই আন্দোলনের কর্মীরা টেসলার মালিক ও চালকদের তাদের গাড়ি বিক্রি করতে এবং শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার বিক্রি করে ইলন মাস্কের ক্ষতি করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ওয়াশিংটন ডিসির কাছাকাছি মেরিল্যান্ড রাজ্যের রকভিলে অবস্থিত একটি টেসলা শোরুমের বাইরে শনিবার প্রায় ৫০ জন বিক্ষোভকারী জড়ো হন। তাদের মধ্যে একজন সুসান বার্নেট, যিনি নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে এসেছেন। তিনি জানান, নিরাপদ জল এবং বিদেশি সরকারের সহায়তার জন্য তিনি এখানে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, “কংগ্রেসকে মনে রাখতে হবে, হোয়াইট হাউজ যা-ই বলুক না কেন, বিশ্বের প্রতি আমাদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে।”
DOGE বিভিন্ন ফেডারেল এজেন্সিতে চুক্তি বাতিল, কর্মীদের ছাঁটাই বা তাদের পদ থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়ার মাধ্যমে ব্যয় সংকোচনের চেষ্টা করছে। DOGE-এর ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, এর মাধ্যমে তারা করদাতাদের ১৪০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৪,৭০০ কোটি টাকা) বাঁচিয়েছে।
তবে সিএনএন এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
ইলন মাস্ক সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন যে, টেসলা শোরুমগুলোতে বিক্ষোভকারীদের অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। তিনি গত সপ্তাহে তার সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘X’-এ পোস্ট করেছেন, “এই অর্থ-প্রদত্ত বিক্ষোভগুলোর আয়োজন ও অর্থায়ন কারা করছে?”
রকভিলের টেসলা শোরুমের বাইরে বিক্ষোভকারীদের একজন ম্যাডেলিন গুপ্তা সিএনএনকে জানান, তিনি কোনো অর্থ পাননি। তিনি ‘গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্রের ঊর্ধ্বে’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড হাতে ধরে ছিলেন।
তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নীতি পরিবর্তনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
টেসলা টেকডাউন আয়োজকরা মনে করেন, মাস্ক এবং ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধিতা সত্ত্বেও তাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তারা সিএনএনকে বলেছে, “ ‘অর্থ-প্রদত্ত বিক্ষোভকারী’ -দের দোষারোপ করাটা আসলে মাস্ক এবং DOGE-এর অজনপ্রিয়তা স্বীকার করতে না পারার ফল।”
এদিকে, টেসলার শেয়ারের দাম কমে গেছে। শুক্রবার শেয়ারের দর ছিল ২৩৯.৪৩ ডলার (প্রায় ২৫,০০০ টাকা), যা ডিসেম্বরের সর্বোচ্চ দামের তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি কম।
এর আগে, টেসলা ঘোষণা করে যে, ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে তাদের বিক্রি ১৩ শতাংশ কমেছে, যা তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পতন।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা ৩৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৮১টি গাড়ি সরবরাহ করেছে, যা ২০২৪ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় প্রায় ৫০ হাজার কম।
অন্যদিকে, ইলন মাস্ক খুব সম্ভবত DOGE থেকে শীঘ্রই সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। শুরুতে মাস্ককে বিলিয়নেয়ার বায়োটেক মোগল বিবেক রামাস্বামীর সঙ্গে DOGE-এর সহ-প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের মতে, এই সংস্থার ব্যয় সংকোচনের কাজ “আগামী ৪ জুলাই, ২০২৬-এর মধ্যে” শেষ হওয়ার কথা ছিল।
তবে রামাস্বামীর মেয়াদ সংক্ষিপ্ত ছিল এবং মাস্কের DOGE-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্বও দ্রুত শেষ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, “কোনো এক সময়ে (মাস্ক) ফিরে যাবেন।
তিনি তাই চান।”
যদিও মাস্ক বুধবার ‘X’-এ পোস্ট করে জানান, তিনি DOGE থেকে সরে যাবেন এমন খবর “মিথ্যা”। তবে প্রশাসন নিশ্চিত করেছে যে, মাস্ক সম্ভবত মে বা জুনের শেষ দিকে তার ১৩০ দিনের মেয়াদ শেষ করার পরে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেবেন।
২০শে মার্চ, মাস্ক টেক্সাসের অস্টিনে টেসলার কর্মীদের কাছে স্বীকার করেন, তিনি “খুব চাপে আছেন। আমার প্রায় ১৭টা কাজ আছে।”
মাস্ক তার এবং তার বৈদ্যুতিক গাড়ির কোম্পানির উপর এই প্রতিক্রিয়ার প্রভাব নিয়েও কথা বলেছেন।
ফক্স নিউজের ব্রেন্ট বেইয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক DOGE নিয়ে সমালোচনার জবাব দেন এবং টেসলার বিরুদ্ধে ভাঙচুরের বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, “সরকারে থাকাটা আমার জন্য সুবিধা বরং অসুবিধাজনক।”
তিনি আরও বলেন, “আমার কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ আমি এখন সরকারের সঙ্গে কাজ করছি।”
টেসলা শোরুমগুলোতে বিক্ষোভ সাধারণত শান্তিপূর্ণ হলেও, কিছু স্থানে ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে।
সিএনএন-এর একজন মিডিয়া বিশ্লেষক সারা ফিশার জানিয়েছেন, মাস্ক সম্ভবত বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে ব্যক্তিগত খাতে ফিরতে চাইবেন এবং DOGE-এর সঙ্গে তার কাজকে একটি বিজয় হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: CNN