মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মী ছাঁটাই: ক্যান্সার, মাইন গবেষণা সহ একাধিক প্রকল্পে সঙ্কট!

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে কর্মী ছাঁটাই: শ্রমিক নিরাপত্তা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।

ওয়াশিংটন, ডিসি – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থা, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (NIOSH) (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ)-এ কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে শ্রমিক সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। জানা গেছে, সিনসিনাটি-ভিত্তিক এই সংস্থাটি প্রায় ১০০০ কর্মীর মধ্যে ৮৫০ জনকেই চাকরিচ্যুত করতে যাচ্ছে।

এই পদক্ষেপের ফলে দমকলকর্মী, খনি শ্রমিক এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারকদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (NIOSH) মূলত রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (Centers for Disease Control and Prevention)-এর একটি অংশ। এই সংস্থাটি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা ও নীতি নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে।

সংস্থাটির কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে দমকলকর্মীদের ক্যান্সার বিষয়ক নিবন্ধন (cancer registry), খনি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং শ্বাসযন্ত্র সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

সংস্থা সূত্রে জানা যায়, এই ছাঁটাইয়ের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম। এর মধ্যে দমকলকর্মীদের ক্যান্সার বিষয়ক একটি ডেটাবেস ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে গেছে, কারণ সেখানে তথ্য প্রযুক্তি কর্মী নেই।

এছাড়াও, গবেষণা বিষয়ক কর্মীদের ছাঁটাইয়ের কারণে গবেষণাগারে থাকা ইঁদুর ও অন্যান্য প্রাণীদেরও মেরে ফেলতে হতে পারে।

কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, এই ছাঁটাইয়ের ফলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়মকানুন তৈরি এবং তা বাস্তবায়নেও সমস্যা সৃষ্টি হবে। NIOSH দীর্ঘদিন ধরে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন গবেষণা ও কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

উদাহরণস্বরূপ, সংস্থাটি খনি শ্রমিকদের ব্ল্যাক লাং (black lung) রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধের জন্য প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। এছাড়াও, বিভিন্ন কারখানায় বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণেও NIOSH গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই পরিস্থিতিতে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের মতে, এই ছাঁটাই শ্রমিকদের প্রতি এক ধরনের ‘প্রকাশ্য আক্রমণ’।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর আশঙ্কা, এর ফলে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি দুর্বল হয়ে পড়বে, যা শ্রমিকদের জীবনহানির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

শুধু শ্রমিক সংগঠনই নয়, চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক বিভিন্ন সংস্থাও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, NIOSH-এর শ্বাসযন্ত্র সুরক্ষার পরীক্ষাগার বন্ধ হয়ে গেলে বিদেশি প্রস্তুতকারকদের সুবিধা হবে, কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর মানদণ্ড পূরণ না করেই তাদের পণ্য সরবরাহ করতে পারবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, NIOSH-এর গবেষণা শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষা বিধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ধরনের গবেষণা বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিক ক্ষতিপূরণ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট খরচ বেড়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের (U.S. Department of Health and Human Services) এই সিদ্ধান্তের ফলে NIOSH-কে একটি নতুন সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। তবে, এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *