মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়: বন্যার তাণ্ডবে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ও ভারী বর্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি।

টেক্সাস থেকে শুরু করে ওহাইও পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, অনেক নদীর পানি এখনো কয়েক দিন পর্যন্ত বাড়তে পারে।

গত কয়েক দিন ধরে চলা অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টেনিসি, মিসৌরি, কেনটাকি, ও আরকানসাস-এর মতো রাজ্যগুলো।

ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাঘাট, ব্রিজ এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, অনেক স্থানে এখনো উদ্ধারকাজ সম্পন্ন করা যায়নি, এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেনটাকি অঙ্গরাজ্য। এখানে নয় বছর বয়সী এক বালক বন্যার পানিতে ভেসে গেছে এবং ৭৪ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মরদেহ পাওয়া গেছে একটি জলমগ্ন গাড়ির ভেতর থেকে।

এছাড়া, মিসৌরিতে গাড়ী থেকে নামার সময় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আরকানসাসেও বৃষ্টির কারণে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, শুধু টেনিসিতেই ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ইতোমধ্যেই অনেকগুলো জনপদ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।

বন্যা পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে জরুরি বিভাগের কর্মীরা উদ্ধারকাজে হিমশিম খাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার থেকে এখন পর্যন্ত কেনটাকির কিছু অংশে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার এবং আরকানসাস ও মিসৌরির কিছু অংশে ২০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য উষ্ণ তাপমাত্রা, অস্থির আবহাওয়া এবং শক্তিশালী বাতাসের চাপকে দায়ী করেছেন।

বন্যার কারণে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লুইসভিলে এবং মেমফিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে, যা সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কেনটাকির ফালমাউথ শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এই শহরের কাছে বয়ে যাওয়া লিকিং নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। প্রায় ৩০ বছর আগে এই অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল, যেখানে ১৫ মিটার উচ্চতায় নদীর পানি উঠেছিল এবং সেই বন্যায় পাঁচ জন মারা গিয়েছিল।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আরকানসাস, মিসিসিপি এবং টেনিসিতে এখনো ভারী বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

মাম্মথ স্প্রিংয়ে একটি রেল সড়কের ব্রিজ বন্যায় ভেসে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *