ইউক্রেনের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক এখনো রাশিয়ার হাতে বন্দী, মুক্তি মিলবে কিনা অনিশ্চিত।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের দুই বছর হতে চলল। এখনো পর্যন্ত দেশটির হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক রাশিয়ার বন্দী শিবিরে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের মুক্তি মিলবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আটককৃতদের অনেকেই গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত, যা ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মুক্তি দেওয়ার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
মেলিতোপলের বাসিন্দা কনস্টান্টিন জিনোভকিন এর কথাই ধরা যাক। প্রায় দুই বছর আগে, রাশিয়ার সেনারা তার বাড়িতে প্রবেশ করে এবং সন্ত্রাসবাদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে আটক করে। তার স্ত্রী লুইসেনা জিনোভকিনা জানান, সামান্য ভুলের অভিযোগ তুলে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলেও, পরে তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়।
বর্তমানে তিনি বিচারের সম্মুখীন এবং তার পরিবার এটিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে মনে করে।
কনস্টান্টিন একা নন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধের জন্য বন্দী সেনাদের পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তি দেওয়া জরুরি।
তবে, আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি এখনো সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না। মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজের প্রধান ওলেক্সান্ড্রা মাতভিয়чук বলেন, “রাজনৈতিক নেতারা প্রাকৃতিক সম্পদ, আঞ্চলিক অধিকার, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এবং এমনকি জেলেনস্কির পোশাক নিয়ে আলোচনা করছেন, কিন্তু মানুষের কথা বলছেন না।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে রাশিয়ার হেফাজতে থাকা বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যা কয়েক হাজার। এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, এমনকি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মতো অভিযোগ আনা হয়েছে।
আটককৃতদের অনেককে মাসের পর মাস কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটকে রাখা হয়েছে।
২০২২ সালের মার্চ মাসে, ১৯ বছর বয়সী মিকিতা স্ক্রিয়াবিনকে খারকিভ অঞ্চল থেকে আটক করা হয়। তার আইনজীবী লিওনিদ সোলোভিয়েভ জানান, মিকিতাকে কোনো অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়নি।
এরপরও তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। মিকিতার মা তেতিয়ানা এখনো জানেন না তার ছেলে কোথায় আছে।
আটককৃতদের মধ্যে অনেকের অভিযোগ, তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা বন্দীদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না এবং তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কেও খুব বেশি খবর পান না।
মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, আটককৃতদের মুক্তি দেওয়া এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা করাটা জরুরি।
মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়ালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ওলেগ অরলভ জানান, তারা অন্তত ১,৬৭২ জন ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিককে শনাক্ত করেছেন, যারা বর্তমানে রাশিয়ার হেফাজতে রয়েছেন।
তাদের মতে, প্রকৃত সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হতে পারে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাশিয়া বেসামরিক নাগরিকদের আটক করে, তাদের হয়রানি করেছে এবং তাদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের জন্য নির্যাতনের আশ্রয় নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যুদ্ধবন্দী নন এমন বেসামরিক নাগরিকদের আটক করা গুরুতর অপরাধ। তাই, মানবাধিকার সংস্থাগুলো অবিলম্বে আটককৃতদের মুক্তি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
একইসঙ্গে, তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ করে দেওয়ার দাবিও জানানো হচ্ছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মানবিক অধিকারের বিষয়টি সব সময় অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনার সময় অবশ্যই আটককৃত বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা