শিরোনাম: আত্ম-অনুসন্ধানে এক নারীর যাত্রা: লরি উলেভার এবং জীবনযুদ্ধের গল্প
লরি উলেভার, যিনি একসময় ছিলেন খ্যাতিমান রন্ধনশিল্পী এবং খাদ্য লেখকদের সহকারী, তার নতুন স্মৃতিচারণমূলক বই ‘কেয়ার অ্যান্ড ফিডিং’-এর মাধ্যমে নিজের জীবনের গল্প বলেছেন। এই বইটিতে তিনি খাদ্য জগৎ, মাদকাসক্তি, এবং প্রয়াত সেলিব্রিটি শেফ অ্যান্থনি বুরদেইনের সঙ্গে তার কাজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। উলেভারের এই আত্ম-অনুসন্ধানের গল্প বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য এক অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত হতে পারে।
নিউ ইয়র্কের ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে (food industry) কাজ করার সুবাদে উলেভারের জীবন বহু উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গেছে। ১৯৯৯ সালে তিনি মারিও বাতালির সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন, যিনি সেই সময়ে খাদ্য জগতে পরিচিত মুখ ছিলেন।
বাтальির সঙ্গে কাজ করার সময়, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং অন্যান্য অনিয়ন্ত্রিত আচরণের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। উলেভার মনে করেন, সেই সময়ে তিনি যেন নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তিনি বলেন, “আমি নিজেকে মূল্যবান মনে করতাম না, আবার নিজেকে পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুও ভাবতাম। সম্ভবত আসক্তির ক্ষেত্রে এটা খুবই স্বাভাবিক।”
এরপর তিনি অ্যান্থনি বুরদেইনের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন। বুরদেইন ছিলেন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, যিনি খাদ্য এবং ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন। উলেভার বুরদেইনের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন এবং তাদের মধ্যে একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
বুরদেইনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা উলেভারের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বুরদেইন তাকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন এবং ভালো কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন।
তবে, বুরদেইনের আকস্মিক মৃত্যু উলেভারের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ২০১৮ সালে বুরদেইনের আত্মহত্যার ঘটনাটি তাকে সম্পূর্ণভাবে নাড়িয়ে দেয়।
সেই কঠিন সময়ে তিনি উপলব্ধি করেন জীবনের গুরুত্ব। এরপর তিনি ধীরে ধীরে আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন এবং সফল হন। বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ জীবন যাপন করছেন।
উলেভারের স্মৃতিচারণে মারিও বাতালির বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগগুলোও উঠে এসেছে। #MeToo আন্দোলনের সময় বাতালির বিরুদ্ধে অনেক নারী কর্মচারী যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন। উলেভার এই বিষয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন, সেই সময়ে কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন ছিল।
বর্তমানে, উলেভার তার ১৬ বছর বয়সী ছেলের জন্য রান্না করাকে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন। তিনি বলেন, “রান্না করা আমার কাছে অপরিহার্য। মাঝে মাঝে আমি ক্লান্ত বোধ করি, কিন্তু আমি মনে করি, আমার ছেলে বড় হচ্ছে এবং তার জন্য রান্না করাটা আমার জন্য সম্মানের।”
লরি উলেভারের এই আত্মজীবনী, একজন নারীর আত্ম-অনুসন্ধান এবং ঘুরে দাঁড়ানোর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যারা জীবনের প্রতিকূলতা জয় করে নতুন করে বাঁচতে চান, তাদের জন্য এই বইটি একটি মূল্যবান অনুপ্রেরণা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান