মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ সুদানের পাসপোর্টধারীদের সকল ভিসা বাতিল করেছে। দেশটির নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দক্ষিণ সুদান সরকারের অসহযোগিতার অভিযোগের পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি আফ্রিকার এই দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ভিসা বাতিলের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দক্ষিণ সুদানের সরকার তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে রাজি না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে দক্ষিণ সুদানের নাগরিকদের নতুন করে ভিসা দেওয়াও বন্ধ করে দেবে। কোনো দেশের নাগরিককে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যখন এমন পদক্ষেপ নেয়, তখন সংশ্লিষ্ট দেশের সহযোগিতা করা উচিত। কিন্তু দক্ষিণ সুদানের সরকার সেই কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর এই প্রথম কোনো দেশের সকল পাসপোর্টধারীর ভিসা বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলো। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসন নীতি কঠোর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে দক্ষিণ সুদানের নাগরিকদের ‘অস্থায়ী সুরক্ষা মর্যাদা’ (Temporary Protected Status বা টিপিএস) দেওয়া হয়েছিল, যা চলতি বছরের ৩ মে শেষ হওয়ার কথা ছিল। টিপিএস-এর আওতায় থাকা বিদেশি নাগরিকরা যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে দেশে ফিরতে না পারলে, তাদের বিতাড়িত করা হয় না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও জানিয়েছেন, দক্ষিণ সুদান সরকার যদি তাদের নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করে, তবে এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।
এদিকে, দক্ষিণ সুদানে সম্প্রতি সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। অনেক পর্যবেক্ষক আশঙ্কা করছেন, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধ আবার শুরু হতে পারে, যেখানে প্রায় ৪ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে দক্ষিণ সুদান আরেকটি গৃহযুদ্ধের দিকে পতিত না হয়। গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্বের নবীনতম এবং দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি দক্ষিণ সুদান বর্তমানে একটি নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যেখানে সংঘাত বাড়ছে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণ সুদানের প্রেসিডেন্ট সালভা কির এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাচারের মধ্যে চলমান উত্তেজনাও পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। গত মাসে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাচারকে গ্রেপ্তার করা হয়, যা ২০১৮ সালের ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তিকে ভেঙে দিয়েছে বলে তাঁর দল অভিযোগ করেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী জুবায় কির ও মাচারের অনুগত বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ সুদানে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং সেখানকার নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা