এআই নিয়ে নেতিয়া জোন্সের বিস্ফোরক মন্তব্য!

ঐতিহ্য আর প্রযুক্তির মেলবন্ধন: অপেরা পরিচালক নেতিয়া জোন্সের চোখে শিল্পের ভবিষ্যৎ।

লন্ডন শহরে বেড়ে ওঠা নেতিয়া জোন্স, রয়্যাল অপেরার সহযোগী পরিচালক হিসেবে পরিচিত। অপেরার জগতে তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি ক্লাসিক্যাল শিল্পের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।

ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি অপেরাকে নিয়ে গিয়েছেন এক নতুন দিগন্তে। তাঁর কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’, ‘লিস্ট লাইক দ্য আদার’ এবং ‘পীটার গ্রাইমস’-এর মতো জনপ্রিয় অপেরা।

সম্প্রতি, সুইডেনের গথেনবার্গ অপেরা হাউসে ‘পীটার গ্রাইমস’-এর মঞ্চায়ন শেষে তিনি কথা বলেছেন শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে। নেতিয়া জোন্স মনে করেন, প্রযুক্তিকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বরং এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।

তাঁর মতে, “ হয় আপনি বিপদ থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেবেন, নয়তো বিশাল ঢেউয়ের মতো আসা এই পরিবর্তনের সঙ্গে এগিয়ে চলবেন। আমার মনে হয়, পরিবর্তনের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়াই ভালো।”

ছোটবেলায় ‘পীটার গ্রাইমস’ অপেরা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন নেতিয়া। তাঁর কথায়, “এই গল্পটা দারুণ, কিন্তু একইসাথে অনেক কষ্টের। গথেনবার্গে যখন এর মঞ্চায়ন হলো, তখন সেখানকার ঠান্ডা আবহাওয়া আর বৃষ্টির কারণে এটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা ভালো ছিল না।”

অপেরার জগৎকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে তিনি খুবই আগ্রহী। তাঁর মতে, অপেরা কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

ছোট আকারের প্রযোজনা থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক, ব্যয়বহুল অথবা avant garde ঘরানার – বিভিন্ন ধরনের অপেরা রয়েছে। সবার কাছেই এর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

প্রযুক্তি এবং শিল্পের সম্পর্ক নিয়ে বলতে গিয়ে নেতিয়া জানান, “প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ভালো এবং খারাপ দুটো দিকই থাকতে পারে। তবে শিল্পী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো প্রযুক্তির সব দিকগুলো অনুসন্ধান করা।

কারণ আমরা তৈরি করতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, ধ্বংস করতে নয়। আমরা যদি প্রযুক্তিকে একটি সুন্দর, কাব্যিক এবং ইতিবাচক কিছু তৈরির উপায় হিসেবে দেখি, তাহলে এটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে, বিভিন্ন কণ্ঠকে শোনাতে পারে এবং সবার জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে।”

এই মুহূর্তে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যখন সারা বিশ্বে এত আলোচনা, তখন নেতিয়া মনে করেন, “এটিকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। হয় এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে, না হয় এর ঢেউয়ের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। আমি মনে করি, এর সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানো উচিত।”

নেতিয়া জোন্স মনে করেন, অপেরা একটি বিশেষ শিল্প মাধ্যম, যা ৩০০ বছর ধরে টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কারণ এটি একটি শিল্প, কোনো মাধ্যম নয়।

তাঁর মতে, অপেরা হলো যেন এক দ্বি-মস্তকবিশিষ্ট দেবতা, যা একইসঙ্গে অতীত এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকে।

ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এই মেলবন্ধন নিয়ে কাজ করা নেতিয়া জোন্স মনে করেন, ভাষার জ্ঞানও এক্ষেত্রে খুব জরুরি। তিনি জানান, সম্প্রতি ‘পীটার গ্রাইমস’-এর জন্য তিনি একটি এআই বন্ধুর সাহায্য নিয়ে সুইডিশ ভাষা শিখেছেন।

তাঁর মতে, ভাষার জ্ঞান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে অপেরার কাজ করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শুধু অপেরাই নয়, নেতিয়া ভিডিও আর্ট এবং অন্যান্য শিল্পকর্মেও যুক্ত। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা তাঁকে নতুনত্ব এনে দেয়। তিনি সবসময় অন্য ধারণা এবং মানুষের সঙ্গে সংযোগ রাখতে পছন্দ করেন।

নেতিয়া জোন্সের এই ভাবনাগুলো একদিকে যেমন শিল্প এবং প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, তেমনই আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেও শিল্পের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করে।

প্রযুক্তির এই যুগে, ঐতিহ্যকে সাথে নিয়ে কিভাবে নতুন পথে এগোনো যায়, নেতিয়া জোন্সের কাজ আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *