ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাবকে ‘অর্থহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এই মন্তব্য করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এমন খবর পাওয়া গেলো।
আরাকচি’র এই বক্তব্য আসে গত রোববার, যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেইকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তিনি তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তবে এর পরপরই ট্রাম্প হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যদি তারা কোনো চুক্তিতে না আসে, তাহলে বোমা হামলা করা হবে’। ইরানের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
দেশটির কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনের আলোচনা আহ্বানের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আরাকচি’র মতে, আলোচনার প্রস্তাব যদি দেন, তাহলে একই সঙ্গে হুমকি দেওয়ার কোনো মানে হয় না। ইরান এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, তবে তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।
আরাকচি আরও বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘সমান অবস্থানে’ থেকে আলোচনা করতে চায়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের সনদের লঙ্ঘন করে সবসময় শক্তি প্রদর্শনের হুমকি দেয় এবং তাদের কর্মকর্তাদের বক্তব্যেও ভিন্নতা দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করার অভিযোগ করে আসছে। ২০১৮ সালে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইরানের সঙ্গে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে হওয়া জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিওপিএ) চুক্তি বাতিল করেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিনিময়ে তারা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হয়েছিল। তবে এরপর থেকে ইরান ওই চুক্তি থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের সরিয়ে নিতে শুরু করে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র মতে, ইরান ইতিমধ্যে একাধিক বোমা বানানোর মতো উপাদান সংগ্রহ করেছে।
এদিকে, ট্রাম্পের যুদ্ধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান হোসেন সালামি বলেছেন, তার দেশ যুদ্ধের জন্য ‘প্রস্তুত’। ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা IRNA-কে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই। আমরা যুদ্ধ শুরু করব না, তবে যেকোনো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছি’।
তবে গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং এর বাইরেও বিভিন্ন কারণে এই মুহূর্তে অঞ্চলে ইরানের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। লেবাননে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের নির্মূল করা হয়েছে এবং গত বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন হয়।
উল্লেখ্য, ইরানের পারমাণবিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় বলে তেহরান দাবি করে। এছাড়া, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র ইসরায়েলের কাছেও অপ্রকাশিত পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা