কারাগারে ৩০ বছর: মেনেনডেজ ভাইদের জীবন!

ক্যালিফোর্নিয়ার একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার দুই আসামি, এরিক ও লাইল মেনেনদেজ, প্রায় তিন দশক ধরে কারাগারের অন্ধকারেই দিন কাটাচ্ছেন। নব্বইয়ের দশকে তাদের বাবা-মাকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর থেকে তারা মুক্তির অপেক্ষায়।

এই দীর্ঘ সময়ে তাদের জীবন কেমন ছিল, কারাভোগের দিনগুলোতে তারা কী করেছেন, এবং মুক্তির জন্য তাদের বর্তমান চেষ্টা—এসব বিষয় নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন।

১৯৮৯ সালে, লস অ্যাঞ্জেলেসের বেভারলি হিলসে মেনেনদেজ পরিবারের বাড়িতে ঘটে এক ভয়াবহ ঘটনা। এরিক ও লাইল তাদের মা-বাবাকে গুলি করে হত্যা করে।

সেই সময় এরিকের বয়স ছিল ১৯, আর লাইলের ২২ বছর। এই হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে তারা প্রথমে পারিবারিক কলহের কথা জানালেও, পরে তাদের আইনজীবীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের বাবা তাদের উপর যৌন নির্যাতন চালাতেন।

এই যুক্তিতে তারা আত্মরক্ষার দাবি করেন, কিন্তু আদালত তা গ্রহণ করেনি।

মামলার শুনানিতে মিডিয়া এবং জনসাধারণের ব্যাপক আগ্রহ ছিল। মেনেনদেজ ভাইদের বিলাস-বহুল জীবনযাত্রা এবং তাদের বাবা-মায়ের বিশাল সম্পত্তি—প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার—এই মামলার আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়।

অবশেষে, ১৯৯৬ সালে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়, প্যারোলের কোনো সুযোগ ছাড়াই।

কারাগারে আসার পর ভাইদের প্রথমে আলাদা করে দেওয়া হয়। এরিককে পাঠানো হয় ফলসোম স্টেট কারাগারে, যা কুখ্যাত একটি স্থান হিসেবে পরিচিত।

লাইলকে পাঠানো হয় ক্যালিফোর্নিয়া কারেকশনাল ইনস্টিটিউশনে। আলাদা হওয়ার এই ঘটনা তাদের জন্য ছিল খুবই কষ্টের।

এরিক একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমার মনে হয়, সম্ভবত আমি আর লাইলের সঙ্গে দেখা করতে পারব না।”

কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তারা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষ করে ফলসোম কারাগারে এরিককে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

লাইলও সেখানকার পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে, তারা হতাশ হননি।

কারাজীবনের কঠিন দিনগুলোতে তারা নিজেদের ভালো মানুষ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।

২০১৮ সালে এরিক ও লাইলকে পুনরায় একত্র করা হয় আর.জে. ডনোভান কারেকশনাল ফ্যাসিলিটিতে। এই কারাগারে তারা বিভিন্ন পুনর্বাসনমূলক কার্যক্রমে অংশ নিতে শুরু করেন।

এরিক সেখানে অন্যদের জন্য বিভিন্ন সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেন, যার মধ্যে ছিল বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী বন্দিদের সাহায্য করা। তিনি আমেরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজও শিখেছিলেন, যাতে শ্রবণপ্রতিবন্ধী কয়েদিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

এরিক কারারক্ষীদের সহায়তায় মেডিটেশন এবং সহিংসতা প্রতিরোধের ওপর কর্মশালা পরিচালনা করতেন। তিনি চমৎকার চিত্রাঙ্কন করতেন এবং কারাগারের সৌন্দর্যবর্ধনেও কাজ করেছেন।

লাইলও পিছিয়ে ছিলেন না। তিনি গ্রিন স্পেস প্রজেক্ট শুরু করেন, যার মাধ্যমে কারাগারের পরিবেশ সুন্দর করার চেষ্টা করা হয়।

এর জন্য তিনি প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। এছাড়াও, লাইল বন্দিদের জন্য একটি সহায়তা দলের নেতৃত্ব দেন, যেখানে তাদের শৈশবের খারাপ অভিজ্ঞতার কথা আলোচনা করা হতো।

মেনেনদেজ ভাইদের এই ভালো কাজের কারণে তাদের মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। প্রাক্তন জেলা অ্যাটর্নি জর্জ গ্যাসকন তাদের মুক্তি দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।

কিন্তু বর্তমানে, নতুন জেলা অ্যাটর্নি নাথান হচম্যান তাদের মুক্তি দেওয়ার বিরোধীতা করছেন। হচম্যানের মতে, মেনেনদেজ ভাইয়েরা তাদের অপরাধের জন্য এখনো সম্পূর্ণ অনুশোচনা করেননি।

তিনি মনে করেন, তারা তাদের বাবার দ্বারা নির্যাতনের যে অভিযোগ করেছেন, সেটি একটি মিথ্যা গল্প।

তবে, মেনেনদেজ ভাইদের পরিবারের সদস্যরা তাদের মুক্তির জন্য এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতে, কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তারা ভালো মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছেন।

তাদের পুনর্বাসনমূলক কার্যক্রম সমাজের জন্য ইতিবাচক উদাহরণ তৈরি করেছে। এখন আদালত অথবা ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোমের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই।

আগামী ১১ই এপ্রিল এই বিষয়ে একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দেখা যাক, এই মামলার ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *