শিরোনাম: ট্রাম্পের নতুন নির্দেশ: যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ভোটদানে জটিলতা?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নতুন নির্বাহী আদেশের কারণে বিদেশে অবস্থানরত মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ভোট দেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এই আদেশে ভোটার নিবন্ধনের জন্য নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিল করা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে।
এমনটা হলে, সুদূরপ্রসারী অঞ্চলে মোতায়েন থাকা সৈন্যদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে এবং সেগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে সমস্যা হতে পারে, যা তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার আশঙ্কা তৈরি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে ভোট দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে, যারা দেশের বাইরে বিভিন্ন মিশনে কাজ করেন, তাদের জন্য ভোট দেওয়াটা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
১৯৮৬ সালের একটি আইন (Uniformed and Overseas Voting Act – UOCAVA) এর মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে, ট্রাম্পের এই নতুন পদক্ষেপ সেই প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই আদেশের সমালোচকরা বলছেন, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রায়ই তাদের কর্মক্ষেত্রের কারণে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতের কাছে পান না। এমনকি যদি পানও, সেগুলো নিরাপদে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানোর মতো প্রযুক্তিগত সুবিধা তাদের নাও থাকতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে, নির্বাচনের সময়সীমার মধ্যে তাদের ভোট গ্রহণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো সৈন্য যদি বিদেশে অবস্থান করেন, তাহলে তাকে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ব্যালট পেপার পাঠাতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ।
সামরিক পরিবারের সঙ্গে যুক্ত সারা স্ট্রেয়ার নামের একজন নারী এই প্রসঙ্গে বলেন, “এই আদেশটি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত বা দেশের বাইরে বসবাস করা মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা বিবেচনা করছে না। বরং এটি তাদের জন্য অপ্রয়োজনীয় জটিলতা তৈরি করছে।”
অন্যদিকে, এই আদেশের সমর্থকরা বলছেন, উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তাদের মতে, বিদেশে অবস্থান করা আমেরিকান নাগরিকরা তাদের পাসপোর্ট সব সময় সঙ্গে রাখেন, তাই নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়া কঠিন হওয়ার কথা নয়।
তারা আরও মনে করেন, পেন্টাগন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য যে আইডি কার্ড সরবরাহ করে, সেখানে নাগরিকত্বের তথ্য যুক্ত করা যেতে পারে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর (Department of Defense) এখনো ট্রাম্পের এই আদেশ কীভাবে কার্যকর করা হবে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সক্রিয়ভাবে কর্মরত সামরিক সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার রক্ষা করতে চান এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে চান।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়া অঙ্গরাজ্যগুলোর (states) নিজস্ব আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ট্রাম্প এই আদেশের মাধ্যমে ফেডারেল তহবিল ব্যবহার করে রাজ্যগুলোকে তার পছন্দের নীতিগুলো অনুসরণ করতে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন।
তবে, রাজ্য নির্বাচন কর্মকর্তারা কীভাবে ভোট গ্রহণ করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন।
বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে অনেক মার্কিন নাগরিক, বিশেষ করে যারা দেশের বাইরে ছিলেন, তারা ভোট দিতে পারেননি কারণ তারা ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি।
এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার জটিলতা। নতুন এই আদেশের কারণে সেই সমস্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন