মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জোসেফ টেটারকে আগামী সপ্তাহে রাশিয়ায় বিচারের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তাকে একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাশিয়ার একটি আদালত চিকিৎসকদের অনুরোধে রাজি হওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারি সূত্রে খবর, মানসিক হাসপাতালের ডাক্তারদের একটি মেডিকেল কমিশন টেটারের মধ্যে “উত্তেজনা, আবেগপ্রবণতা এবং বিভ্রম” খুঁজে পায়।
এর মধ্যে “ভয়” এবং “নিজের অবস্থার প্রতি সমালোচনামূলক মনোভাবের অভাব”-এর মতো বিষয়গুলিও ছিল।
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে মস্কোতে ৪৬ বছর বয়সী টেটারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অভিযোগ, তিনি একটি হোটেলে কর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার পর একজন পুলিশ অফিসারকে মারধর করেন।
দোষী সাব্যস্ত হলে টেটারের পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। আদালতের নথির বরাত দিয়ে সরকারি বার্তা সংস্থা তাস (TASS) জানিয়েছে, মস্কোর একটি আদালত টেটারকে মানসিক রোগের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য ডাক্তারদের অনুরোধ গ্রহণ করেছে।
টেটারের আইনজীবী এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া টেটারকে “সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার” চেষ্টা করছে।
আইনজীবীর মতে, টেটার “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিপীড়নের কারণে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে” রাশিয়ায় এসেছিলেন।
এই ঘটনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং মানবাধিকারের প্রশ্ন জড়িত। অতীতে, সোভিয়েত যুগে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের মিথ্যা মানসিক রোগের অভিযোগের মাধ্যমে দমিয়ে রাখার জন্য পরিচিত ছিল সের্বস্কি সেন্টার।
টেটারের আইনজীবী মনে করেন, টেটারকে হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত সেই পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
টেটারের মামলার শুনানির দিন ১৪ই এপ্রিল ধার্য করা হয়েছে। তাস আরও জানায়, যদি আদালত মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট গ্রহণ করে, তাহলে টেটারের বিচার প্রক্রিয়া বাতিলও করা হতে পারে।
সেক্ষেত্রে বিচারের পরিবর্তে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তি, রুশ সেনাবাহিনীর সমালোচনা বা সামান্য চুরির অভিযোগে বেশ কয়েকজন মার্কিন নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে রাশিয়া। এর আগে, সাংবাদিক ইভান গার্শকোভিচ এবং প্রাক্তন মার্কিন মেরিন পল হুইলানকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছিল তারা।
বাস্কেটবল তারকা ব্রিটনি গ্রিনারকেও অস্ত্র ব্যবসায়ী ভিক্টর বাউটের সঙ্গে বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। গ্রিনারকে মাদক রাখার অভিযোগে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
জোসেফ টেটারের ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনা মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা