বহুচর্চিত টিভি সিরিজ ‘হোয়াইট লোটাস’-এর পোশাকি প্রভাব, ফ্যাশন দুনিয়ায় ঝড়।
হলিউডের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘হোয়াইট লোটাস’ -এর তৃতীয় সিজনের সমাপ্তি ঘটেছে সম্প্রতি। থাইল্যান্ডের একটি বিলাসবহুল হোটেলে আসা ধনী অতিথিদের কেন্দ্র করে বোনা এই সিরিজের গল্প দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
তবে শুধু গল্প বা চরিত্র নিয়ে আলোচনা নয়, ফ্যাশন দুনিয়াতেও এই সিরিজের পোশাকের কদর বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। খবর অনুযায়ী, এই সিরিজের পোশাকের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে, অনেক নামী ব্র্যান্ডের পোশাক দ্রুত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
‘হোয়াইট লোটাস’-এর পোশাকের ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন অ্যালেক্স বোভার্ড। তিনি জানিয়েছেন, এই সিরিজের জন্য পোশাক প্রস্তুত করতে বিভিন্ন উৎস থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
বাজারের পুরনো দোকান থেকে শুরু করে নামিদামি ব্র্যান্ড—সব জায়গা থেকেই পোশাক সংগ্রহ করা হয়েছে। এমনকি, কিছু পোশাক তৈরিও করা হয়েছে।
ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘হোয়াইট লোটাস’-এর পোশাকের জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ হলো, সিরিজের চরিত্রগুলো সবসময় অবকাশ যাপনে থাকে।
অবকাশ যাপনের পোশাকে একটি বিশেষ আকর্ষণ থাকে, যা দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে। এই সিরিজে ব্যবহৃত পোশাকগুলো দর্শকদের মধ্যে ফ্যাশন সচেতনতা বাড়াতে সহায়তা করে।
এই সিরিজের পোশাকের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে, অনেক ডিজাইনার তাদের পোশাক এই সিরিজে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
এমনকি, জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার সাইমন পোর্ট জ্যাকেমাসও এই সিরিজের জন্য পোশাক ডিজাইন করতে চেয়েছেন। সাধারণত, কোনো সিরিজে পোশাক ব্যবহারের জন্য নির্মাতারা ব্র্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
কিন্তু এক্ষেত্রে, জ্যাকেমাস সরাসরি বোভার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
টিভি সিরিজ ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। নব্বইয়ের দশকে ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’ (Sex and the City) -এর দৌলতে ম্যানোলো ব্ল্যানিক (Manolo Blahnik) এবং জিমি চু (Jimmy Choo)-এর মতো জুতার ব্র্যান্ডগুলো বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে।
‘ম্যাড মেন’ (Mad Men) -এর চরিত্রগুলোও অসংখ্য ডিজাইনারকে প্রভাবিত করেছে। সম্প্রতি, ‘ইউফোরিয়া’ (Euphoria) এবং ‘এমিলি ইন প্যারিস’ (Emily in Paris)-এর মতো সিরিজগুলোও ফ্যাশন দুনিয়ায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছে।
ফ্যাশন বিষয়ক পরামর্শদাতা বেথ বেন্টলি বলেছেন, “টিভি এবং ফ্যাশনের মধ্যেকার সম্পর্ক এখন অনেক গভীর হয়েছে। ‘সাকসেশন’ (Succession) -এর মতো সিরিজগুলো অপরিচিত ব্র্যান্ডগুলোকে পরিচিতি এনে দিয়েছে, যা দর্শকদের মধ্যে নতুন আগ্রহ তৈরি করেছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘হোয়াইট লোটাস’-এর মতো সিরিজের পোশাকগুলো দর্শকদের প্রভাবিত করে।
কারণ, এই সিরিজের গল্পে ধনী ব্যক্তিদের জীবনযাত্রা দেখানো হয় এবং দর্শক সেই জীবন ধারণের সঙ্গে পরিচিত হতে চায়।
‘হোয়াইট লোটাস’-এর পোশাকের এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ হলো, সিরিজটি দর্শকদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দেয়। সিরিজটি মুক্তির পর এর পোশাক নিয়ে অনলাইনে আলোচনা শুরু হয়, যা দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তোলে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টিভি সিরিজ এবং ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যেকার এই সম্পর্ক ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে।
এমনকি, ব্র্যান্ডগুলো তাদের নিজস্ব কন্টেন্ট তৈরি করে ফ্যাশন ট্রেন্ডকে আরও বেশি প্রভাবিত করতে পারে।
এই মুহূর্তে, বাংলাদেশের ফ্যাশন জগৎও বিভিন্ন টিভি সিরিয়াল ও সিনেমার দ্বারা প্রভাবিত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন জনপ্রিয় নাটকের পোশাকের ডিজাইন অনুসরণ করে এখানকার ফ্যাশন সচেতন মানুষজন। ‘হোয়াইট লোটাস’-এর এই সাফল্য প্রমাণ করে, পোশাক মানুষের রুচি ও পছন্দের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান