ইরাকি নারীর হৃদয়: হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির গল্প!

ইরাকের একটি প্রাচীন ইহুদি সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি, যা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে, সেই গল্প নিয়ে রচিত হয়েছে সামান্থা এলিসের নতুন বই ‘চোপিং অনিয়নস অন মাই হার্ট’। বইটিতে লেখক তাঁর শিকড়ের সন্ধানে ইরাকি-ইহুদি সম্প্রদায়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং তাদের জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন।

বহু বছর আগে, ইরাক থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা ইহুদিদের বংশধর সামান্থা। তাঁর নিজের পরিবারের ইরাকের স্মৃতিগুলো একত্রিত করতে গিয়ে তিনি এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন। তিনি অনুভব করেন, তাঁর নিজের ছেলের কাছে শৈশবের সেই ইরাকি-আরবি ভাষা পৌঁছে দেওয়ার মতো শব্দভাণ্ডার তাঁর নেই।

এই উপলব্ধি থেকেই তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের ইতিহাসকে নতুন করে জানতে আগ্রহী হন।

বইটিতে এলিস তাঁর পরিবারের সদস্যদের, বিশেষ করে তাঁর নানি আইদার সঙ্গে কাটানো সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ‘ফারহুদ’ নামে পরিচিত এক ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী ছিলেন আইদা।

১৯৪১ সালে বাগদাদে সংঘটিত এই pogrom-এ (নৃশংস হামলা) ২০০ জনেরও বেশি ইহুদিকে হত্যা করা হয়। আইদার পরিবারকে সে সময় রক্ষা করেছিলেন তাঁদের মুসলিম প্রতিবেশীরা।

এলিসের লেখায় উঠে এসেছে সেই সময়ের কথা, যখন জীবন ছিল অনিশ্চিত, সবসময় ছিল হারানোর ভয়।

লেখিকা তাঁর বইয়ে কেবল ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেননি, বরং ইরাকি-ইহুদি সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি গভীর মনোযোগ দিয়েছেন। তিনি তাঁদের খাদ্য, শিল্পকলা, গান এবং ভাষার কথা বলেছেন, যা তাঁদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, সেই ভাষা, সংস্কৃতি আজ বিলুপ্তির পথে। ইরাকে এখন হাতে গোনা কয়েকজন ইহুদির বসবাস। ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকার কারণে অনেক ইরাকি ইহুদির দেশে ফেরার অধিকার নেই।

তবে, এত দুঃখ আর কষ্টের মাঝেও এলিসের এই বইটি আশাবাদী। তিনি তাঁর পরিবারের স্মৃতিচারণ করেছেন, যা তাঁদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার এক চেষ্টা।

তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে এই স্মৃতিগুলো ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান সম্পদ হতে পারে। এলিস তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, কীভাবে তিনি তাঁর ছেলেকে ঐতিহ্যবাহী ‘মাখবুস’ (খেজুর দিয়ে তৈরি মিষ্টি) খাওয়াচ্ছেন।

তাঁর মতে, এই খাবারগুলো যেন অতীতের আনন্দ আর ভালোবাসার স্মৃতিচিহ্ন, যা তাঁদের বর্তমানকে আরও সুন্দর করে তোলে।

‘চোপিং অনিয়নস অন মাই হার্ট’ বইটি কেবল একটি সম্প্রদায়ের গল্প নয়, বরং এটি একটি সংস্কৃতির টিকে থাকার সংগ্রাম।

এই বইয়ের মাধ্যমে এলিস আমাদের মনে করিয়ে দেন, কীভাবে আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *