মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধি: আতঙ্কে বিশ্ব!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের জেরে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে একদিকে যেমন আমেরিকার অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক মন্দা এবং মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়ছে, তেমনই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কগুলোতেও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্যে চীন, কানাডা, মেক্সিকো, জার্মানি ও জাপানের নাম উল্লেখযোগ্য। এই দেশগুলো ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানানো শুরু করেছে।

চীন পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যা বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলেছে। অন্যদিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ হলো দেশটির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করা। ট্রাম্প মনে করেন, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বিদেশি পণ্যকে নিরুৎসাহিত করা যাবে এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো পুনরায় দেশে ফিরে আসবে।

যদিও অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এই পদক্ষেপ কার্যত ফলপ্রসূ হবে না। বরং এর নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে মূল্যবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে।

শেয়ার বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। গত সপ্তাহে শেয়ার বাজারের সূচক উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

এর ফলে অনেক সাধারণ মার্কিনির সঞ্চয়েও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। অনেকে তাদের বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তবে ট্রাম্প তার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। তিনি মনে করেন, এটি আমেরিকার অর্থনীতির জন্য সঠিক পদক্ষেপ এবং এর মাধ্যমে তিনি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করছেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার মতে, ট্রাম্প এখন আর কোনো খারাপ খবরের পরোয়া করছেন না।

তিনি তার লক্ষ্যে অবিচল থাকতে চান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আত্মঘাতী হতে পারে।

কারণ, এর ফলে একদিকে যেমন দেশটির অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলোতেও ফাটল ধরবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব এখনো স্পষ্ট না হলেও, বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে।

বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, আমদানি পণ্যের দাম বাড়লে তা দেশের বাজারেও প্রভাব ফেলবে।

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আগামী কয়েক মাস বা বছর ধরে এর প্রভাব স্পষ্ট হবে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *