গাজায় যুদ্ধ: “আমি কোনো সংখ্যা নই, আমারও একটা গল্প আছে”
গাজার ফুখারি অঞ্চলের বাসিন্দা এক তরুণীর জীবনের গল্প, যিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ক্রমাগত বোমা হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছেন। যুদ্ধের বিভীষিকা আর বাস্তুচ্যুতির বেদনায় জর্জরিত হয়েও তিনি চান, মানুষ যেন তাকে একটি পরিচিতি হিসেবে মনে রাখে, কোনো নিছক সংখ্যা হিসেবে নয়।
যুদ্ধ শুরুর আগে, তিনি খান ইউনুসের কাছে আল-ফুখারিতে নিজের বাড়িটি তৈরি করেছিলেন, যা ছিল তার পরিবারের জন্য একটি আশ্রয়স্থল। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে তাদের ঘরটি ধ্বংস হয়ে যায়। উদ্বাস্তু জীবনের কষ্ট তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফেরে। তিনি বলেন, “আমি চাই না, আমাকে ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ বা শুধু একটি সংখ্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হোক। আমারও একটি গল্প আছে।”
ওই তরুণী জানান, গাজায় জন্ম নেওয়া এবং বেড়ে ওঠা তার জন্য সহজ ছিল না। তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে বড় হয়েছি। উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি কঠিন পরিস্থিতিতে। বাবা দীর্ঘদিন ধরে অবরোধের কারণে কাজ হারিয়েছেন। পরিবারের বড় মেয়ে হিসেবে বাবার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “১৯৪৮ সালে আমার দাদা-দাদিকে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। তারা খান ইউনুস শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আমি নিজেও সেই শরণার্থী শিবিরে জন্মেছি। কিন্তু ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সেখানেও আমাদের শান্তিতে থাকতে দেয়নি।”
২০০০ সালে তাদের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর উদ্বাস্তু জীবন কাটাতে হয়েছে তাদের। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNRWA)-এর সহায়তায় তারা ২০০৩ সালে আল-ফুখারিতে একটি নতুন ঘর পান। কিন্তু যুদ্ধের কারণে সেই ঘরও এখন ধ্বংসের মুখে।
ওই তরুণী বলেন, “যুদ্ধ আমাকে ভেতর থেকে শেষ করে দিয়েছে। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি, শক্ত থাকতে। কিন্তু এখন মনে হয়, আমার শরীর আর পারছে না। আমি চাই, বিশ্ববাসী আমাদের এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিক।”
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “এখানে প্রতিনিয়ত বোমা পড়ছে, ক্ষেপণাস্ত্র ও ট্যাংকের গোলা এসে পড়ছে। চারদিকে শুধু ধ্বংস আর মৃত্যু। আমরা উদ্বাস্তু হয়েছি, আমাদের ঘর-বাড়ি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমি বুঝি, বাস্তুচ্যুত হওয়ার যন্ত্রণা কী।”
তিনি তার বন্ধুদের কাছে অনুরোধ করেছেন, তার কথাগুলো যেন সবাই মনে রাখে। তিনি চান, মানুষ জানুক, তিনি শুধু একটি সংখ্যা নন, বরং তার একটি জীবন ছিল, ছিল স্বপ্ন। তিনি শিক্ষকতা করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, ভালোবাসতেন গাজাকে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় টিকে থাকার এই কঠিন লড়াইয়ের মাঝেও তিনি চান, একদিন শান্তি ফিরে আসবে। তিনি বিশ্বাস করেন, একদিন হয়তো উত্তর দিকের মানুষজন তাদের ঘরে ফিরতে পারবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা