যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করা হলে তা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ইউক্রেনের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা। বর্তমানে রুশ বাহিনীর দখলে থাকা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার প্রচেষ্টা হলে তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ইউক্রেনের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এনার্গো team-এর প্রধান পেত্রো কোতিন এক সাক্ষাৎকারে এই উদ্বেগের কথা জানান।
ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাপোরিঝিয়া, যা ছয়টি চুল্লী (reactor) নিয়ে গঠিত। এই কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যাগুলো হলো পর্যাপ্ত শীতলীকরণ জলের অভাব, কর্মী সংকট এবং বিদ্যুতের দুর্বল সরবরাহ।
কোটিন বলেন, রাশিয়ার বাহিনী যদি এটি পুনরায় চালু করার চেষ্টা করে, তবে তা কোনোভাবেই নিরাপদ হবে না। এমনকি, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে একটি চুল্লী চালু করাও অসম্ভব।
২০২২ সালের বসন্তে রাশিয়া এই কেন্দ্রটি দখল করে এবং নিরাপত্তার কারণে কয়েক মাস পরেই তা বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে এটি যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি, ডিনিপ্রো নদীর তীরে অবস্থিত।
রাশিয়া এই স্থানটি নিজেদের অধীনে রাখতে এবং পুনরায় চালু করতে চায় বলে জানা গেছে। তবে, কবে নাগাদ এটি চালু করা হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
রাশিয়ার পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম-এর প্রধান অ্যালেক্সি লিখাচেভ ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, ‘সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূল হলেই’ কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করা হবে।
কোটিন আরও জানান, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করতে হলে রুশ সেনাদের অপসারণ করতে হবে, সেইসাথে এলাকাটিকে মাইনমুক্ত ও সামরিকীকরণমুক্ত করতে হবে।
তাঁর মতে, যুদ্ধমুক্ত পরিবেশে ইউক্রেন এই কাজটি করতে গেলে দুই মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে, রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধকালে এটি চালু করা ‘অসম্ভব’ হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করতে হলে সেখানে একটি পাম্পিং স্টেশন স্থাপন করতে হবে, কারণ শীতলীকরণের জন্য পর্যাপ্ত জল নেই। জানা গেছে, রাশিয়ান সৈন্যরা জুন ২০২৩ এ কাছেই অবস্থিত নোভা কাখোভা বাঁধটি ধ্বংস করে দেওয়ায় ডিনিপ্রো নদী থেকে জলের সহজ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বর্তমানে একটি সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। এখানে সামরিক যান এবং সম্ভবত কিছু অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্যও মজুত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর পরিদর্শকরাও কেন্দ্রে সশস্ত্র সৈন্য ও সামরিক কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার এমন পদক্ষেপে কেন্দ্রটির নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। মার্কিন জ্বালানি বিভাগ জানিয়েছে, বর্তমানে কেন্দ্রটিতে অপর্যাপ্ত এবং অপ্রশিক্ষিত কর্মীর সংখ্যা অনেক কম, যা যুদ্ধের আগের কর্মীর এক-তৃতীয়াংশের চেয়েও কম।
কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি ৭৫০ কিলোভোল্টের উচ্চ-ভোল্টেজ লাইনের সংযোগ স্থাপন করতে হবে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিন্তু চারটি উচ্চ-ভোল্টেজ লাইনের মধ্যে তিনটিই এখন রাশিয়ার দখলে থাকা ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে গেছে।
কোটিন আরও জানান, ‘তারা নিজেরাই লাইনগুলো ধ্বংস করেছে।’ বর্তমানে কেন্দ্রটি ঠান্ডা অবস্থায় (cold shutdown) চালু রাখার জন্য ইউক্রেন থেকে আসা একটি ৭৫০ কিলোভোল্টের লাইন এবং আরেকটি ৩৩০ কিলোভোল্টের লাইনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
তবে, শেলিংয়ের কারণে ইতোমধ্যে আটবার এই বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে, যার ফলে কেন্দ্রটিকে ব্যাকআপ জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian