মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টির আশঙ্কা বাড়ছে, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
কর্মকর্তাদের ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্যের জেরে মার্কিন শেয়ার বাজারেও বড় ধরনের দরপতন হয়েছে, যা ইতোমধ্যে ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি করেছে।
হোয়াইট হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তারা যখন বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির পক্ষে সাফাই গাইছিলেন, ঠিক তখনই তাদের মধ্যে দেখা যায় মতানৈক্য। কেউ বলছেন, এই শুল্ক বহাল থাকবে, আবার কারও মতে, দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।
এই দ্বিধাবিভক্ত বার্তা বাজারের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক একটি সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে জানান, এই শুল্ক এখনই তুলে নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি বহাল থাকবে এবং এর মাধ্যমে ট্রাম্প সরকার বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে চাইছে।
অন্যদিকে, অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্ক কমানো এবং বাণিজ্য বাধা দূর করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। কৃষি সচিব ব্রুক রলিন্সও একই সুর মিলিয়ে বলেন, প্রায় ৫০টি দেশ শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছে।
ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি ঘোষণার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। রিপাবলিকান দলের অনেক নেতাই এর বিরোধিতা করছেন। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড় কর বৃদ্ধি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ আসন্ন নির্বাচনে দলের খারাপ ফলের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে। তাদের মতে, এই শুল্কনীতির কারণে একটি ‘ট্রাম্প মন্দা’ আসন্ন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্কের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা আরও ঘনীভূত হতে পারে। অর্থনীতিবিদ ব্রুস কাসম্যানের মতে, বিশ্বজুড়ে মন্দা আসার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
বিল ক্লিনটনের আমলে মার্কিন অর্থমন্ত্রী ল্যারি সামারস এই শুল্ককে ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এর ফলে মার্কিন ভোক্তাদের প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, কর্মকর্তারা বাজারের অস্থিরতা কমাতে বিভিন্ন যুক্তি দেখাচ্ছেন। কেউ বলছেন, বাজার ‘নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে’, আবার কেউ বলছেন, বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।
এমনকি, অ্যান্টার্কটিকার কাছে অবস্থিত ‘হার্ড আইল্যান্ড’ এবং ‘ম্যাকডোনাল্ড আইল্যান্ড’-এর মতো জনমানবহীন দ্বীপে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণ জানতে চাইলে কর্মকর্তারা এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্যনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাই, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান