মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস (NPS) তাদের একটি ওয়েবসাইটে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে যা দাসপ্রথা থেকে পালিয়ে আসা আফ্রিকান-আমেরিকানদের সাহায্য করার ঐতিহাসিক ‘আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড’-এর প্রতি উৎসর্গীকৃত। এই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে, বিখ্যাত দাসপ্রথা বিরোধী কর্মী হ্যারিয়েট টাবম্যানের ছবি এবং তাঁর একটি উদ্ধৃতি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে এই ধরনের পরিবর্তন একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ‘ডিইআই’ (বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলকতা) বিষয়ক কার্যক্রমগুলো বাতিল করার চেষ্টা করছে, তারই ফলস্বরূপ এই পরিবর্তনগুলো এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড-এর ওয়েবসাইটে আগে হ্যারিয়েট টাবম্যানের একটি উক্তি ও ছবি ছিল, যিনি এই গোপন পথের অন্যতম প্রধান ‘পরিচালক’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ওয়েবসাইটের পুরনো সংস্করণ এবং বর্তমান সংস্করণের মধ্যে তুলনা করে দেখা গেছে, এই পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ‘দাস’ এবং ১৮৫০ সালের ‘ফুগিটিভ স্লেভ অ্যাক্ট’-এর মতো শব্দগুলোও ওয়েবসাইট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে, ওয়েবসাইটটি ‘স্বাধীনতা ও মুক্তির আমেরিকান আদর্শ’-এর ওপর জোর দিচ্ছে এবং বিশেষভাবে দাসত্বের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে না। তবে, হ্যারিয়েট টাবম্যানের ওপর NPS-এর একটি আলাদা ওয়েবপেজ রয়েছে, যেখানে তাঁর জন্ম, দাসত্ব থেকে মুক্তি এবং আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের মাধ্যমে অন্যদের সাহায্য করার বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এই পেজটিতে সম্ভবত কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
শুধু ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসই নয়, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে অন্যান্য সরকারি ওয়েবসাইটেও বিতর্কিত পরিবর্তন এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, নিউইয়র্কের স্টোনওয়াল মনুমেন্টের একটি ওয়েবপেজ থেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ ও ‘কুইয়ার’ শব্দগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, যা ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল।
এছাড়াও, ক্রীড়াবিদ জ্যাকি রবিনসনের একটি পেজও কিছু সময়ের জন্য সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইটে, বিশেষ করে পেন্টাগনের ওয়েবসাইটে, ‘জাতিগত বিদ্বেষ’, ‘এলজিবিটি’, ‘ইতিহাস’ এবং ‘প্রথম’ -এর মতো শব্দগুলো খুঁজে ছবি ও লেখা সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই পদক্ষেপগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসন জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস এবং স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন এনেছিল।
এই ঘটনাগুলো আমেরিকার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সমালোচকরা মনে করেন, এর মাধ্যমে ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন