সুপ্রিম কোর্টের লড়াই: নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা, বাড়ছে বিতর্ক!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য সুপ্রিম কোর্টগুলোতে বিচারক নির্বাচনের পদ্ধতি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে যেমন এই নির্বাচনগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠছে, তেমনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

সম্প্রতি উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্বাচনের প্রচারে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, যা নজিরবিহীন। এই নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও জড়িত ছিলেন।

খবর অনুযায়ী, এর ফলস্বরূপ রাজ্য আদালতগুলোতে রাজনৈতিক বিভাজন আরও স্পষ্ট হচ্ছে।

উইসকনসিনের এই নির্বাচনের পরেই প্রশ্ন উঠেছে, বিচারকদের নির্বাচন করা কি সঠিক পদ্ধতি? কারণ, এই ধরনের নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয় এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর প্রভাব বাড়ে।

এর ফলে, যারা আইন ও জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করেন, তাদের নিরপেক্ষতা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়। বিচার বিভাগকে অরাজনৈতিক ও স্বাধীন রাখার গুরুত্ব অনেক।

কারণ, রাজ্যের আইন ও জনগণের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে এই আদালতগুলোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে বিচারক নির্বাচনের ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। কিছু রাজ্যে রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, আবার কোথাও সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে বিচারক নির্বাচন করা হয়।

কোনো কোনো রাজ্যে গভর্নর বা আইনসভার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগের ব্যবস্থা রয়েছে। আবার, এমন কিছু রাজ্য আছে যেখানে একটি বিশেষ কমিটির মাধ্যমে বিচারকদের নির্বাচন করা হয়।

ক্যানসাস রাজ্যে বর্তমানে বিচারক নিয়োগের যে ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, তা পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। এখানকার রিপাবলিকানরা চাইছেন, বিচারকদের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করা হোক। তাদের মতে, এর ফলে বিচারকদের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ হবে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, এর মূল উদ্দেশ্য হলো রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির বিচারক নিয়োগ করা, যা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করবে।

ক্যানসাসের এই প্রস্তাবের বিরোধীরা উইসকনসিনের উদাহরণ তুলে ধরেছেন, যেখানে নির্বাচনের বিপুল খরচ এবং রাজনৈতিক বিভাজন দেখা গেছে। তাদের মতে, বিচারকদের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করলে, প্রার্থী নির্বাচনে অভিজ্ঞতার পরিবর্তে প্রচারণার দক্ষতা বেশি গুরুত্ব পাবে।

পেনসিলভানিয়াতেও আসন্ন নির্বাচনে উইসকনসিনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেখানেও রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ডেমোক্রেটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিচারকদের মেয়াদ বাড়ানো এবং পুনঃনির্বাচন বন্ধ করা যেতে পারে। কারণ, পুনঃনির্বাচনের চাপের কারণে অনেক সময় অর্থের প্রভাব বাড়ে। যদিও কোনো নিখুঁত ব্যবস্থা নেই, তবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *