যুক্তরাষ্ট্রে বন্যা: হৃদয়বিদারক দৃশ্য! জলবন্দী শহর, মৃতের মিছিল…

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বন্যা : মৃতের সংখ্যা বেড়ে আঠারো।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও টর্নেডোর কারণে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে পানিতে। এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আঠারোতে। খবর সূত্রে জানা যায়, কেন্টাকি, টেনিসি, এবং আলাবামার মতো রাজ্যগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যার কারণে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক শহরে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য বালির বস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। কেন্টাকির রাজধানী ফ্রাঙ্কফোর্টে উদ্ধারকর্মীরা রাবার বোট নিয়ে জলমগ্ন রাস্তা দিয়ে বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

ফ্রাঙ্কফোর্টের একটি রেস্টুরেন্টের জেনারেল ম্যানেজার ওয়েন্ডি কুইর বলেন, “আমার ৫২ বছরের জীবনে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আর দেখিনি।” নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। কুইর আরও জানান, টানা কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি চলছে, যা কিছুতেই থামছে না।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, কেন্টাকি, টেনিসি এবং আলাবামার অনেক অঞ্চলে এখনো ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, আলাবামা, জর্জিয়া ও ফ্লোরিডায় টর্নেডোরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে অনেক মানুষ চরম উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

স্থানীয় একটি হোটেলের কর্মী কেভিন গর্ডন বলেন, “এই বন্যা যেন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ।” তিনি আরও জানান, হোটেলটি এখনো খোলা আছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তবে পরিস্থিতি খারাপ হলে হয়তো তাদেরও হোটেল বন্ধ করে দিতে হতে পারে।

বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধুমাত্র টেনিসিতেই ১০ জন মারা গেছেন। কেন্টাকিতে নয় বছর বয়সী এক বালক স্কুল বাসে যাওয়ার সময় বন্যায় ভেসে যায়। আরকানসাসের একটি পাঁচ বছর বয়সী শিশু গাছ চাপায় নিহত হয়েছে। এছাড়া, মিসৌরিতে ঝড়ে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে গিয়ে এক ১৬ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবক অগ্নিনির্বাপক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা (National Weather Service) জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি রাজ্যের অনেক স্থানে “গুরুতর বন্যা পরিস্থিতি” সৃষ্টি হতে পারে। এতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সেতু এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উত্তর-মধ্য কেন্টাকিতে জরুরি বিভাগের কর্মকর্তারা ফ্যালমাউথ এবং বাটলার শহরগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। এই শহরগুলো লিকিং নদীর কাছাকাছি অবস্থিত। প্রায় ত্রিশ বছর আগে এই নদীতে রেকর্ড পরিমাণ পানি বাড়ায় পাঁচ জন মারা গিয়েছিল এবং এক হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

অন্যদিকে, ফ্লাইটঅ্যাওয়ার.কম (FlightAware.com) সূত্রে জানা যায়, শনিবার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলে ৫২৩টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং ৬,৯০০টির বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। রবিবার দুপুরের মধ্যে ১২১টি ফ্লাইট বাতিল এবং ৩,৮৬৫টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা এই বিরূপ আবহাওয়ার জন্য উষ্ণ তাপমাত্রা, অস্থির বায়ুমণ্ডল, শক্তিশালী বাতাস এবং উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসা প্রচুর জলীয় বাষ্পকে দায়ী করছেন।

আর্কানসাসের জোন্সবোোতে শনিবার প্রায় ১৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা শহরটিতে এপ্রিল মাসের একদিনে হওয়া সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এছাড়া, মেমফিসে বুধবার থেকে প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার এবং পশ্চিম মেমফিসে ২৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

ডায়ার্সবার্গে (Dyersburg) শনিবার অনেক লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। তাদের মধ্যে ৭৭ বছর বয়সী জর্জ ম্যানসও ছিলেন, যিনি টর্নেডোর সতর্কবার্তা শুনে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যান। কয়েক দিন আগেও এই শহরে টর্নেডোর কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *