৮০ বছর পরও ওকিনাওয়ায় যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ! হাড় খুঁজে ফিরছেন এক ব্যক্তি

ওকিনাওয়ার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন আজও, হাড় ও বোমার সন্ধান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা আজও জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপের আনাচে-কানাচে গেঁথে রয়েছে। যুদ্ধের আট দশক পরেও, এখানকার মাটি যেন পুরনো ক্ষতচিহ্নগুলো উগরে দিচ্ছে।

ধ্বংসস্তূপের গভীরে আজও মিলছে মানুষের কঙ্কাল, অবিস্ফোরিত বোমা, আর যুদ্ধের বিভীষিকার নীরব সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা নানা নিদর্শন। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই যুদ্ধের স্মৃতিগুলো, যা বাংলাদেশি পাঠকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ওকিনাওয়ার যুদ্ধ ছিল প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ভয়ংকর ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৪৫ সালের ১ এপ্রিল মার্কিন বাহিনী দ্বীপটিতে আক্রমণ করে, যা চলেছিল প্রায় আড়াই মাস।

এতে কয়েক লক্ষ মানুষের জীবনহানি ঘটেছিল। স্থানীয় বাসিন্দা, জাপানি সেনা এবং মিত্রশক্তির সেনারা—সবারই মৃত্যু হয়েছিল এই যুদ্ধে।

এই যুদ্ধের স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে ওকিনাওয়ার মানুষকে। স্থানীয় এক ব্যক্তি, তাকাamatsu Gushiken, যিনি “হাড় সন্ধানকারী” নামে পরিচিত, তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন সেইসব হতভাগ্য মানুষের কঙ্কাল খুঁজে বের করার কাজে।

গভীর জঙ্গলে, গুহার মধ্যে, এমনকি জনবহুল রাস্তার পাশেও তিনি খুঁজে ফেরেন যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন। তাঁর অনুসন্ধানের মূল উদ্দেশ্য হলো, নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করা এবং তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।

Gushiken-এর মতে, “তাঁরা মানুষ ছিলেন, আর আমিও মানুষ। তাঁদের প্রতি আমার মানবিক দায়িত্ব রয়েছে।

গবেষক Gushiken-এর অনুসন্ধানে একদিকে যেমন যুদ্ধের ভয়াবহতা উন্মোচিত হয়, তেমনি উঠে আসে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দিক। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার ফলে, কঙ্কাল এবং যুদ্ধের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে।

যদিও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সকলের পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন, তবুও তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ওকিনাওয়ায় আজও দেখা যায় যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন। ধ্বংসপ্রাপ্ত দোকানঘরের দেওয়াল, সেনাদের আত্মহত্যার স্মৃতিবিজড়িত স্থান, এমনকি রাস্তার পাশে থাকা অবিস্ফোরিত গ্রেনেড—এগুলো যুদ্ধের ভয়াবহতার নীরব সাক্ষী।

এখানকার Himeyuri Peace Museum-এ দেখা যায়, যুদ্ধের সময় নার্স হিসেবে কাজ করা কিশোরী মেয়েদের মর্মস্পর্শী কাহিনি। যুদ্ধের বিভীষিকা তাদের জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছিল, তা আজও দর্শকদের চোখে জল এনে দেয়।

যুদ্ধ শেষ হওয়ার এত বছর পরেও, ওকিনাওয়ার মানুষজন আজও তাঁদের স্বজনদের খুঁজে চলেছেন। তাঁদের এই সংগ্রাম যুদ্ধের স্মৃতিগুলো নতুন করে জাগিয়ে তোলে এবং শান্তির বার্তা পৌঁছে দেয় বিশ্বজুড়ে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ওকিনাওয়ার স্মৃতিচারণ শুধু একটি অঞ্চলের গল্প নয়, বরং এটি বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক প্রভাবের প্রতিচ্ছবি। তাই, আসুন, আমরা সবাই এই যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে শিক্ষা নিয়ে শান্তির পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাই।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *