ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ: চীন কি সংকটকে সুযোগে পরিণত করবে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ: বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক (ট্যারিফ) আরও বৃদ্ধি করেছে, যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এই পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে এবং এর প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে। বাংলাদেশের জন্যও এই ঘটনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর নতুন করে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এর ফলে, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া পণ্যের ওপর বিদ্যমান শুল্কসহ করের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশের বেশি। এর জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর একই হারে শুল্ক বসিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা বিরল মৃত্তিকা খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ এবং কিছু মার্কিন কোম্পানির ওপর বাণিজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

চীনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা এই বাণিজ্য যুদ্ধের মোকাবিলায় প্রস্তুত এবং এর মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম এবং কর্মকর্তাদের বক্তব্যেও সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তারা জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে, তবে আকাশ ভেঙে পড়বে না। চীনের নেতারা বিশ্বকে বোঝাতে চাইছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। তারা বিশ্ব বাণিজ্যকে আরও উন্মুক্ত রাখতে আগ্রহী এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।

বিশ্লেষকদের মতে, চীন মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ তাদের নিজেদের আন্তর্জাতিক অবস্থানে দুর্বল করে দেবে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির একটি নতুন মেরুকরণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, বিশ্ব এখন যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে নতুন বিশ্বায়নের দিকে যাচ্ছে, যেখানে চীনের প্রভাব বাড়বে।

এই পরিস্থিতিতে চীন ইতিমধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে অর্থনৈতিক আলোচনা শুরু করেছে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে এই দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়ং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় পরিবর্তন। তিনি এর মাধ্যমে মুক্ত বাণিজ্য এবং নিয়ম-ভিত্তিক বিশ্বায়নের সমাপ্তি দেখছেন।

তবে, এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীনের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছিল। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ০.৭ শতাংশ পর্যন্ত প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চীন অভ্যন্তরীণ ভোগ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের দ্রুত প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে উভয় পক্ষের মধ্যে শুল্ক আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বাণিজ্য যুদ্ধ কতদূর গড়াবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, এটি নিশ্চিত যে, এর ফলে বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামের পরিবর্তন হতে পারে, যা বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানিকে প্রভাবিত করবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প, যা প্রধানত রপ্তানিনির্ভর, তারাও এই পরিবর্তনের শিকার হতে পারে। তাই, এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *