গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কাজ করা ১০ জন ব্রিটিশ নাগরিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ জমা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার আইনজীবীদের একটি দল। ব্রিটিশ আইনজীবী মাইকেল ম্যানসফিল্ড কেসি-র নেতৃত্বে আইনজীবীদের একটি দল সোমবার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের যুদ্ধাপরাধ ইউনিটে ২৪০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র জমা দেবেন।
অভিযোগপত্রে বেসামরিক নাগরিক ও ত্রাণকর্মীদের ওপর ইচ্ছাকৃত হত্যা, নির্বিচারে বেসামরিক এলাকা, বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে হামলা, ঐতিহাসিক স্থান ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে সমন্বিত আক্রমণ এবং বেসামরিক নাগরিকদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন ব্রিটিশ নাগরিক এবং তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। এই অভিযোগগুলি অক্টোবর ২০২৩ থেকে মে ২০২৪ পর্যন্ত গাজায় সংঘটিত ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় ৫০,০০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয় এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।
অভিযোগটি প্রস্তুত করেছেন হেগের একটি বিশেষজ্ঞ দল, যাদের মধ্যে ব্রিটিশ আইনজীবী এবং গবেষকরাও রয়েছেন। মামলার কারণে অভিযুক্তদের নাম এবং পুরো প্রতিবেদনটি এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে, ম্যানসফিল্ড জানিয়েছেন, “যদি আমাদের কোনো নাগরিক কোনো অপরাধ করে, তাহলে আমাদের অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এমনকি আমরা যদি বিদেশি সরকারের খারাপ আচরণ বন্ধ করতে না পারি, তবে অন্তত আমাদের নাগরিকদের খারাপ আচরণ করা থেকে বিরত রাখতে পারি। ফিলিস্তিনে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়া থেকে ব্রিটিশ নাগরিকদের বিরত থাকতে হবে।
গাজাকেন্দ্রিক প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস (PCHR) এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক পাবলিক ইন্টারেস্ট ল’ সেন্টার (PILC)-এর পক্ষ থেকে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের দাবি, অভিযুক্তদের প্রত্যেকটি অপরাধ যুদ্ধাপরাধ অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে সংঘটিত ঘটনার বর্ণনা করে বলেন, “হাসপাতালের উঠোনে মৃতদেহগুলো বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে ছিল এবং সেখানে গণকবর দেওয়া হয়েছিল।” তিনি আরও জানান, একটি বুলডোজার “মৃতদেহের উপর দিয়ে চালিয়ে যায়, যা ছিল অত্যন্ত হৃদয়বিদারক দৃশ্য।
ডক্টি স্ট্রিট চেম্বার্সের আইনজীবী শন সামারফিল্ড বলেছেন, তাঁরা খোলা উৎস থেকে পাওয়া তথ্য এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অভিযোগপত্রটি তৈরি করেছেন। তাঁর মতে, “ব্রিটিশ নাগরিকরা যে এমন নৃশংসতায় জড়িত, তার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে এবং সাধারণ মানুষ এটা জানতে পারলে বিস্মিত হবে।
তিনি আরও যোগ করেন, অভিযুক্তদের বিচারের জন্য “ওল্ড বেইলি”-তে হাজির করা হোক, এমনটাই তাঁরা চান।
আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, ব্রিটেন “গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ”-এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে এবং তাঁদের বিচার করতে বাধ্য। ২০০১ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইনের ৫১ ধারায় বলা হয়েছে, “ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের আইনে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ করা একটি অপরাধ”, তা অন্য কোনো দেশে সংঘটিত হলেও এর বিচার করা যাবে।
প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের (PCHR) পরিচালক রাজি সোরানি বলেছেন, “এটা বেআইনি, অমানবিক এবং যথেষ্ট হয়েছে। সরকার এটা বলতে পারে না যে তারা কিছুই জানে না; আমরা তাদের কাছে সমস্ত প্রমাণ সরবরাহ করছি।” পাবলিক ইন্টারেস্ট ল’ সেন্টারের (PILC) আইন পরিচালক পল হেরন বলেছেন, “আমরা এই অভিযোগ দাখিল করছি, যাতে পরিষ্কার হয়, এসব যুদ্ধাপরাধ আমাদের নামে নয়।”
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক দলটিকে অভিযোগগুলো তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করে বহু সংখ্যক আইন ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ সমর্থন জানিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান