গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি পদক্ষেপ ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনে জানা যায়, গাজার ভেতরে একটি বিশাল এলাকাকে ‘নিধনযজ্ঞের এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সৈন্যদের দেওয়া সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
সাক্ষ্য অনুযায়ী, হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার প্রায় এক কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে ঘরবাড়ি, কারখানা এবং কৃষিজমি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।
সৈন্যদের নির্দেশ ছিল, এই এলাকার মধ্যে যারা প্রবেশ করবে, তাদের সবাই হবে আক্রমণের লক্ষ্য। এই এলাকাটিকে একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে তৈরি করার কথা বলা হলেও, বাস্তবে এটি পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে।
সৈন্যদের বর্ণনানুসারে, এলাকাটি যেন হিরোশিমার ধ্বংসস্তূপের মতো দেখাচ্ছিল।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালায়। এরপর থেকেই গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান জোরদার হয়।
‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’ নামের একটি সংগঠন, যা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ভেটেরানদের নিয়ে গঠিত, সৈন্যদের এই সাক্ষ্যগুলো সংগ্রহ করেছে। সংগঠনটি ২০০৪ সাল থেকে ফিলিস্তিনিদের ওপর সামরিক বাহিনীর কার্যকলাপের আসল চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে চারজন সৈন্যের সাক্ষ্য রয়েছে, যারা এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)-এর সৈন্যদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, এই এলাকায় কোনো ফসল, স্থাপনা বা মানুষ রাখা যাবে না।
এমনকি আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ এবং কবরস্থানগুলোও ধ্বংস করে দেওয়া হয়, কিছু ব্যতিক্রম বাদে। সৈন্যদের ভাষায়, এই ‘নিধনযজ্ঞের এলাকা’ ছিল বিশাল আকারের একটি মৃত্যুফাঁদ।
যেখানে মানুষ বসবাস করত, চাষাবাদ করত, সেই স্থানগুলো পরিণত হয় এক বিশাল ধ্বংসস্তূপে।
এক সেনা কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, এই এলাকার গাজাবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার পরেই মূলত বাড়িঘর ধ্বংসের অভিযান শুরু হয়। সৈন্যদের প্রতিদিন সকালে কয়েকটি স্থানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর নির্দেশ দেওয়া হতো।
ধ্বংস করার কারণ সম্পর্কে তাদের খুব বেশি কিছু জানানো হয়নি। তাদের মতে, যা ঘটছিল, তা সম্ভবত প্রয়োজনীয়তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল।
আরেকজন সেনা সদস্য জানান, তাদের ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, ওই এলাকায় যে কোনো পুরুষকে দেখামাত্র গুলি করার জন্য। নারী, শিশু বা বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে, তাদের তাড়ানোর নির্দেশ ছিল।
সীমান্ত এলাকার এই পরিস্থিতিকে অনেক সৈন্য ‘মৃত্যুপুরী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সাক্ষ্যগুলোতে জানা যায়, হামলার প্রতিশোধ হিসেবে অনেক সময় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সম্মুখীন হয়েছেন।
গাজার এই ধ্বংসযজ্ঞের ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার কৃষিজমিগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খাদ্যসংকট আরও তীব্র হয়েছে।
এমনকি খাবার সংগ্রহের জন্য যারা সেখানে গিয়েছিলেন, তাদেরও জীবনহানির ঘটনা ঘটেছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এই ঘটনার ফলে সেখানকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian