টিকিট জালিয়াতির শিকার: যুক্তরাজ্যের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা
বর্তমান ডিজিটাল যুগে, অনলাইনে টিকিট কেনার প্রবণতা বাড়ছে, যা একদিকে যেমন সুবিধা নিয়ে এসেছে, তেমনই জালিয়াতির ঝুঁকিও বেড়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে টিকিট জালিয়াতি নিয়ে একটি গবেষণা চালানো হয়েছে, যেখানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই গবেষণার আলোকে, অনলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা প্রয়োজন।
যুক্তরাজ্যে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটির চার জনের মধ্যে একজন টিকিট জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। টিকিট জালিয়াতির কারণে ভুক্তভোগীরা গড়ে প্রায় ৮২ পাউন্ড (প্রায় ১১,৫০০ টাকা) করে হারিয়েছেন।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, জনপ্রিয় ইভেন্টগুলির টিকিটের উচ্চ চাহিদা এবং ‘ফোমো’ (FOMO – Fear Of Missing Out) বা কিছু হারানোর ভয়, জালিয়াতদের জন্য সুযোগ তৈরি করে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা গ্রাহকদের ঠকাচ্ছে।
বিভিন্ন কনসার্ট, খেলা বা উৎসবের টিকিটের চাহিদা বেশি থাকার কারণে জালিয়াত চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রিয় শিল্পী টেলর সুইফটের কনসার্টের টিকিট বিক্রির সময় ব্রিটিশ ভক্তরা প্রায় ১০ লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪ কোটি টাকা) এর বেশি হারিয়েছিলেন।
এছাড়া, জনপ্রিয় ব্যান্ড ওএসিসের যুক্তরাজ্যে পুনর্মিলন কনসার্টের টিকিট কিনতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ভক্তদের প্রত্যেককে গড়ে প্রায় ৩৪৬ পাউন্ড (প্রায় ৪৮,০০০ টাকা) করে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়েছে। লেডি গাগার আসন্ন কনসার্টের টিকিট নিয়েও জালিয়াতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই ধরনের জালিয়াতি সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া বিজ্ঞাপন বা পোস্টের মাধ্যমে শুরু হয়। টিকিট কেনার জন্য আগ্রহীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলা হয়, এবং একবার টাকা পরিশোধ হয়ে গেলে, ভুক্তভোগীরা টিকিট পান না।
অনেক সময়, ভুক্তভোগীরা লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি প্রকাশ করেন না, অথবা ক্ষতির পরিমাণ কম হওয়ার কারণে অভিযোগ করেন না।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, টিকিট পাওয়ার জন্য অনেকেই সন্দেহজনক উৎস থেকে টিকিট কিনতে রাজি হন। এই ধরনের ঝুঁকি নেওয়ার কারণে জালিয়াতির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ব্যক্তিরা এই ধরনের জালিয়াতির শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন কোনো জনপ্রিয় ইভেন্টের টিকিট সহজলভ্য বা কম দামে পাওয়া যায়, তখন অনেক ভক্ত টিকিট পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে প্রতারিত হন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, অনলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। টিকিট কেনার আগে অবশ্যই বিক্রেতার সত্যতা যাচাই করতে হবে।
পরিচিত মাধ্যম থেকে টিকিট কেনার চেষ্টা করা উচিত। সন্দেহজনক কোনো অফার দেখলে, সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
এছাড়া, অনলাইনে টিকিট কেনার সময় ব্যক্তিগত তথ্য এবং আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
টিকিট জালিয়াতির শিকার হওয়া থেকে বাঁচতে, আসুন আমরা সবাই সচেতন হই এবং আমাদের বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করি।
তথ্য সূত্র: The Guardian