মার্কিন শুল্ক ও তেলের দামে ধস: মধ্যপ্রাচ্যে শেয়ারবাজারে বিরাট পতন!

মধ্যপ্রাচ্যের শেয়ার বাজারে বড় দরপতন, তেলের দাম ও মার্কিন শুল্কের কোপে: বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ?

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি এবং তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের শেয়ার বাজারগুলোতে বড় ধরনের দরপতন দেখা দিয়েছে। এর ফলে, এই অঞ্চলের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর অর্থনীতিতে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা তাদের রাজস্ব এবং সরকারি ব্যয়ের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দুবাই, আবু ধাবি, সৌদি আরব, কাতার এবং কুয়েতের শেয়ার বাজারে কয়েক দিনের ব্যবধানে বড় ধরনের সূচক পতন হয়েছে। এছাড়া, পাকিস্তানের শেয়ার বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম প্রায় ৬৩ ডলারের কাছাকাছি। গত পাঁচ দিনের হিসাব করলে, তেলের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে। এক বছর আগেও তেলের দাম ছিল প্রায় ৯০ ডলারের বেশি।

অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে তেলের দাম প্রায় ৩০ শতাংশের মতো কমেছে। এই পরিস্থিতিতে, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জন্য উৎপাদন খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির কারণেও অনেক দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এই নীতির আওতায়, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে।

ইরাক ও সিরিয়ার মতো দেশগুলোর জন্য এই শুল্কের পরিমাণ আরও বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, দেশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে তাদের, যারা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং তেলের ওপর নির্ভরশীল।

শেয়ার বাজারের এই পতনের পেছনে তেলের দাম কমা ছাড়াও আরও একটি কারণ রয়েছে। সম্প্রতি ওপেক প্লাস-এর সদস্য দেশগুলো তেলের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর ফলে বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়বে, যা দাম আরও কমার কারণ হতে পারে। ওপেক প্লাস-এর এই সিদ্ধান্তের কারণেও বাজারের অস্থিরতা বাড়ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের এই অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বহু বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন এবং তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এছাড়া, বাংলাদেশ বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল। তাই, সেখানকার অর্থনৈতিক সংকট বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

পাকিস্তানের পরিস্থিতিও বেশ উদ্বেগজনক। দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের কারণে সেখানকার শেয়ার বাজারে দরপতন হয়েছে। পাকিস্তানের সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা জানিয়েছে।

সব মিলিয়ে, মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে প্রবাসী শ্রমিক এবং বাণিজ্যের ওপর এর খারাপ প্রভাব কমানো যায়।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *