চীনের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় চীন পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বেইজিং ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে একতরফা নীতি, সংরক্ষণবাদ এবং অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির অভিযোগ এনেছে। একই সাথে, তারা মার্কিন কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে শুল্ক সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে বলেছে।
সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, “আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনকে পাশ কাটিয়ে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।”
গত সপ্তাহে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এর আগে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসেও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। ট্রাম্পের দাবি ছিল, চীন ফেন্টানাইল সংকট সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে।
হংকং ও সাংহাইয়ের বাজারে দরপতন হলেও সোমবার বেইজিং ছিল বেশ আত্মবিশ্বাসী। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘পিপলস ডেইলি’ কঠোর ভাষায় জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে প্রভাব পড়লেও আকাশ ভেঙে পড়বে না। তারা আরও জানায়, “যুক্তরাষ্ট্রের নির্বিচার শুল্কের মোকাবিলায় আমরা জানি আমরা কী করছি এবং আমাদের হাতে এর উপযুক্ত হাতিয়ার রয়েছে।”
শুক্রবার সন্ধ্যায় চীন ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পাল্টা ব্যবস্থা ঘোষণা করে। এর মধ্যে ছিল কিছু মার্কিন কোম্পানি থেকে শস্য, পোল্ট্রি ও হাড়ের খাবারের আমদানি স্থগিত করা এবং বিভিন্ন প্রযুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিরল মৃত্তিকা খনিজ পদার্থের রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা। একই সাথে, তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (World Trade Organization) একটি মামলাও দায়ের করেছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে কোনো বৈঠকে বসবেন কিনা, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। লিন জিয়ান এ বিষয়ে অন্য বিভাগের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, “চাপ ও হুমকি চীনের সঙ্গে মোকাবিলা করার সঠিক পথ নয়। চীন তার বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
এদিকে, গত কয়েক দিন ধরে চীনা সরকারি কর্মকর্তারা টেসলা, জিই হেলথকেয়ারসহ বেশ কয়েকটি মার্কিন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাণিজ্য উপমন্ত্রী লিং জি বৈঠকে বলেন, “শুল্ক সমস্যার মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রে। আমরা আশা করি, মার্কিন কোম্পানিগুলো সমস্যার মূলে যাবে, উপযুক্ত বিবৃতি দেবে, এবং বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় একসঙ্গে কাজ করবে।” লিং জি আরও জানান, চীন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং বিনিয়োগ নিরাপদ থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করেছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। বিশেষ করে, বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতিপথ পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।