শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা পরিমাপের এক বিশেষ সূচক হলো সিএনএনের ‘ফিয়ার অ্যান্ড গ্রিড ইনডেক্স’। বিশ্ব অর্থনীতির অস্থির পরিস্থিতিতে এই সূচকটি বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বাজারের উত্থান-পতন, অর্থনীতির গতিবিধি – এসবের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীরা অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হন। মানুষের এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা মানসিক অবস্থাকে একটি স্কেলে পরিমাপ করার ধারণা থেকেই এই সূচকের জন্ম।
ওয়ারেন বাফেটের বিখ্যাত উক্তি অনুযায়ী, “অন্যরা যখন ভীত হয়, তখন ভয় পাওয়া উচিত, আর যখন অন্যরা লোভী হয়, তখনই লোভ করা উচিত।” কিন্তু বাজারের এই ‘মানসিকতা’ বোঝা সবসময় সহজ নয়।
বাজার চলে আসে ‘অ্যানিমেল স্পিরিট’-এর ওপর ভিত্তি করে, যা অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনস-এর ভাষায় বিনিয়োগকারীদের অস্থির আচরণকে নির্দেশ করে। বাজারের এই অস্থিরতা মাপার জন্য প্রায় এক দশক আগে সিএনএন-এর সংবাদকর্মীরা তৈরি করেন ‘ফিয়ার অ্যান্ড গ্রিড ইনডেক্স’।
এই ইনডেক্স মূলত ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত একটি স্কেলে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতাকে প্রকাশ করে। যেখানে ‘০’ মানে চরম ভীতি (extreme fear), আর ‘১০০’ মানে চরম লোভ (extreme greed)।
এটি তৈরি করা হয়েছে মূলত বাজারকে ভয় (শেয়ার বিক্রি করা, বন্ডের মতো নিরাপদ সম্পদ কেনা) অথবা লোভের (শেয়ার কেনা, ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করা) দ্বারা চালিত করা হচ্ছে কিনা, তা বোঝার জন্য। সম্প্রতি, বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় এই সূচকটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে।
২০০৮ সালের আর্থিক সংকট এবং পরবর্তী ইউরোপীয় ঋণ সংকটের প্রেক্ষাপটে এই সূচকের ধারণা তৈরি হয়।
সিএনএন-এর সাবেক নির্বাহী সম্পাদক, লেক্স হ্যারিস জানান, তাঁরা এমন একটি উপায় খুঁজছিলেন যা বাজারের দৈনিক উত্থান-পতন ছাড়াও সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিমাপ করতে পারে। এরপর তাঁরা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে এই ইনডেক্সের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেন।
এই সূচকের প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোলাটিলিটি ইনডেক্স (VIX), বাজারের গতি, অপশন কন্ট্রাক্ট এবং ট্রেজারি বন্ডের মতো নিরাপদ সম্পদের চাহিদা ইত্যাদি।
২০১২ সালে যখন এই ইনডেক্স চালু করা হয়, তখন সিএনএন মানির নির্বাহী সম্পাদক ক্রিস পিকক বলেছিলেন, এটি “বিনিয়োগকারীদের অর্থ স্থানান্তরের পেছনে থাকা মূল বিষয়গুলো চোখের পলকেই তুলে ধরে”।
শেয়ার বাজারের এই সূচকটির ধারণা তৈরি এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারলে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরাও উপকৃত হতে পারেন। কারণ, বিশ্ব বাজারের এই সূচক আমাদের দেশের অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলে।
বিশেষ করে, প্রবাসী আয়, রপ্তানি বাজার এবং বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এর প্রভাব দেখা যায়।
তথ্য সূত্র: CNN