বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, সমুদ্রপথে কার্বন নিঃসরণ কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক নৌ পরিবহন সংস্থা (IMO)। এই লক্ষ্যে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর কার্বন নিঃসরণের ওপর কর আরোপের বিষয়ে আলোচনা চলছে, যা কার্যকর হলে এটি হবে বিশ্বের প্রথম বৈশ্বিক কার্বন ট্যাক্স।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পরিবেশের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে।
লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য IMO-এর মেরিন এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন কমিটি’র (Marine Environment Protection Committee) বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এই কমিটির প্রধান লক্ষ্য হলো ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্র পরিবহন খাতকে কার্বন নিরপেক্ষ করা।
মূলত, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজগুলোর গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের উদ্দেশ্যে একটি নতুন বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত এই বিধিমালায় কার্বন নিঃসরণের ওপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর আরোপের কথা বলা হয়েছে, যা জাহাজগুলোকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের দিকে উৎসাহিত করবে।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩% গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয় সমুদ্র পরিবহন থেকে। জাহাজগুলো আকারে বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণও বেড়েছে, যা কার্বন নিঃসরণের অন্যতম প্রধান কারণ।
এই পরিস্থিতিতে, সমুদ্র পরিবহন খাতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই বিষয়ে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। কিছু দেশ, বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলো, একটি নির্দিষ্ট হারে কর আরোপের পক্ষে মত দিয়েছে।
তাদের মতে, এটি একটি ন্যায্য এবং কার্যকরী সমাধান। অন্যদিকে, চীন, ব্রাজিল, সৌদি আরব ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো কার্বন ক্রেডিট ট্রেডিং মডেলের পক্ষে।
এই মডেল অনুযায়ী, যে জাহাজগুলো তাদের নির্গমন লক্ষ্যমাত্রার নিচে থাকবে, তারা ক্রেডিট পাবে এবং যারা বেশি কার্বন নিঃসরণ করবে, তাদের ক্রেডিট কিনতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে হাইড্রোজেন, মিথানল এবং অ্যামোনিয়ার মতো সবুজ জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হবে। এর ফলে, কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যাবে।
যদি এই প্রস্তাব গৃহীত হয়, তবে এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হবে এবং উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও সবুজ প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকতে উৎসাহিত করবে।
আগামী অক্টোবরে এই বিধিমালা চূড়ান্তভাবে গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এটি কার্যকর হয়, তবে ২০২৭ সাল থেকে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এর ফলে, সমুদ্র পরিবহন খাতে একটি বড় পরিবর্তন আসবে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে সহায়ক হবে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।