ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি!

মার্কিন শুল্কনীতি নিয়ে সতর্কবার্তা জেপি মর্গান প্রধানের

বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের খবর হলো, জেপি মর্গান চেজ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেমি ডিমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি নিয়ে গুরুতর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন। তার মতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের ফলস্বরূপ মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা এবং বিশ্ব মঞ্চে আমেরিকার দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

জেমি ডিমন, যিনি বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম, সম্প্রতি শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে লেখা এক বার্ষিক চিঠিতে এই উদ্বেগের কথা জানান। তিনি উল্লেখ করেন, “সাম্প্রতিক শুল্কের কারণে সম্ভবত মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে এবং এর ফলে অনেকেই মন্দা আসার সম্ভাবনা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। শুল্ক আরোপের ফলস্বরূপ মন্দা আসবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধীর করে দেবে।”

ডিমনের মতে, আমেরিকার “অসাধারণ অবস্থান” তৈরি হয়েছিল তার অর্থনৈতিক, সামরিক এবং নৈতিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু শুল্ক এবং ট্রাম্পের “আমেরিকা প্রথম” পররাষ্ট্রনীতি সম্ভবত বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ স্থানকে দুর্বল করে দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, “যদি পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক ও অর্থনৈতিক জোটগুলো ভেঙে যায়, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকাও দুর্বল হয়ে পড়বে।”

শুল্ক (Tariffs) মূলত আমদানি করা পণ্যের ওপর ধার্য করা কর। সাধারণত, কোনো দেশ তার নিজস্ব শিল্পকে সুরক্ষা দিতে বা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে এই ধরনের শুল্ক আরোপ করে থাকে।

তবে জেমি ডিমনের আশঙ্কা, এই শুল্ক নীতির কারণে একদিকে যেমন পণ্যের দাম বাড়তে পারে, তেমনি বিশ্ব অর্থনীতিতে দেখা দিতে পারে অস্থিরতা।

ডিমনের এই সতর্কবার্তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলছেন। অতীতে তিনি ইউক্রেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধসহ বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক কারণের কথা উল্লেখ করেছেন, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

তবে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে সরাসরি এমন কঠোর মন্তব্য তিনি আগে করেননি।

যদিও এর আগে, এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, ডিমন বলেছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক যদি মার্কিন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে এবং সামান্য মুদ্রাস্ফীতি ঘটায়, তবে এতে খুব বেশি উদ্বেগের কারণ নেই।

কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর এবং বিস্তৃত।

ডিমনের সতর্কবার্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, বাজারের সম্ভাব্য পতন নিয়ে তার উদ্বেগ। তিনি মনে করেন, শেয়ার বাজার আরও নিচে নামতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের নিম্নগতি সত্ত্বেও, শেয়ারের দাম এখনও তুলনামূলকভাবে বেশি রয়েছে। এই পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্ব বাজারে যদি মন্দা দেখা দেয়, তবে তা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়, আমদানি খরচ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

মোটকথা, জেমি ডিমনের এই সতর্কবার্তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। ভবিষ্যতের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করে, এই সতর্কবার্তা বিশ্বনেতাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *