মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে আবারো দরপতন দেখা দিয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন করে উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। সোমবার দিনের শুরুতে প্রধান সূচকগুলো উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়, যা গত কয়েক দিনের ধারাবাহিক পতনেরই অংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং মন্দা আসার আশঙ্কাই এই দরপতনের মূল কারণ।
ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচকটি সোমবার সকালে প্রায় ২.১ শতাংশ হ্রাস পায়, অন্যদিকে এস অ্যান্ড পি ৫০০ এবং নাসডাক সূচকও যথাক্রমে ২.৪ শতাংশ ও ২.৭ শতাংশ কমে যায়। এই পতন এতটাই তীব্র ছিল যে, কিছু সময়ের জন্য এস অ্যান্ড পি ৫০০-কে ‘বেয়ার মার্কেট’-এর কাছাকাছি দেখাচ্ছিল, যেখানে বাজারের শীর্ষস্থান থেকে ২০ শতাংশের বেশি দরপতন হয়।
তবে, বাজারের এই অস্থিরতার মধ্যে একটি আশার আলোও দেখা যাচ্ছে। শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায়, বিনিয়োগকারীরা হয়তো এখন সুযোগ খুঁজছেন।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, শেয়ার বাজার এখন ‘অভারসোল্ড’ অবস্থায় রয়েছে, অর্থাৎ, চাহিদা তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনে পরবর্তীতে লাভের প্রত্যাশা করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এই দরপতনের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, তিনি চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর শর্ত দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি যদি বহাল থাকে, তাহলে তা বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। গোল্ডম্যান স্যাকস-এর মতো প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষকরাও একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুনিটজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরছে না।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, বিদেশি বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্সের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন শেয়ার বাজারের এই পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কবার্তা। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে, তার প্রভাব থেকে বাংলাদেশও মুক্ত থাকতে পারবে না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন