মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতিতে পরিবর্তনের জেরে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন দেশের বাজারে। বিশেষ করে, মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক দেশ এখন নতুন করে আলোচনায় বসার পথ খুঁজছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সোমবার বিশ্ববাজারগুলোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এর ফলে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য অংশীদাররা এখন দ্বিধায় পড়েছেন—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো বাণিজ্য চুক্তি করার সুযোগ আছে কিনা, তা নিয়ে।
জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক এক বৈঠকে এই শুল্কনীতিকে ‘অর্থহীন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, এককভাবে কোনো দেশের শুল্ক কমানোর চেষ্টা অতীতে সফল হয়নি।
চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিয়ম ভাঙার অভিযোগ আনা হয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে, যা সুরক্ষা নীতি এবং অর্থনৈতিক নিপীড়নের শামিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় হংকং এবং সাংহাইয়ের বাজারে দরপতন দেখা যায়। হংকংয়ের শেয়ার সূচক, হ্যাং সেং, ১৩.২ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা প্রায় ২০টি মার্কিন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং শুল্কের বিষয়টি সমাধানে ‘বাস্তব পদক্ষেপ’ নিতে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ইনকিও চিয়ং চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটনে যাবেন এবং দেশটির পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করবেন।
তিনি এই শুল্কের কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কমাতে আলোচনা করবেন।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও মার্কিন শুল্কের বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রীকে শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়ন করতে এবং সুপারিশ তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী জাফরুল আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, তাঁর দেশ এই ইস্যুতে আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরির চেষ্টা করবে।
ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গম, তুলা, তেল এবং গ্যাস আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, যা তাদের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কমাতে সহায়ক হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।
তবে, একই সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্যে কিছু চ্যালেঞ্জও দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ওপর এর প্রভাব কেমন হবে, সেদিকে এখন সকলের নজর।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারের উচিত হবে দ্রুত পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস