মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ: সাহায্য কমানোর ফলে মাতৃমৃত্যুহার বাড়ার আশঙ্কা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সতর্ক করে জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে মাতৃস্বাস্থ্য খাতে অর্থ সাহায্য কমানোর ফলে গর্ভবতী মায়েদের মৃত্যুহার আবার বাড়তে পারে। গত দুই দশকে মাতৃমৃত্যু হ্রাসের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি দেখা গিয়েছিল, তা এই সাহায্য হ্রাসের কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
WHO-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বে মাতৃমৃত্যু প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছিল। এর ফলে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মায়ের জীবন বাঁচার সম্ভাবনা বেড়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে বিশ্বে প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার নারীর মৃত্যু হয়েছে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, সাহায্য কমার কারণে এই সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও কমার বদলে বাড়তে পারে।
সংস্থাটি জানাচ্ছে, বিভিন্ন দেশে মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় গর্ভবতী মায়েরা মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন। এর ফলস্বরূপ, অনেক দেশ মাতৃ, নবজাতক ও শিশুদের স্বাস্থ্য পরিষেবা কমিয়ে দিতে, ক্লিনিক বন্ধ করতে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে।
এছাড়া, রক্তক্ষরণ, প্রি-একলাম্পসিয়া এবং ম্যালেরিয়ার মতো মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ঔষধ ও সরঞ্জামের সরবরাহও ব্যাহত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাহায্য কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একসময় তারা প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি অর্থ দিত। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর তারা আকস্মিকভাবে এই খাতে প্রায় সব ধরনের সাহায্য বন্ধ করে দেয়।
ইউরোপের কয়েকটি দেশও রাশিয়াকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনার কারণে তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়াচ্ছে, যার ফলে তারা বৈদেশিক সাহায্য কমাচ্ছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও সুইজারল্যান্ড ইতিমধ্যেই তাদের সাহায্য বাজেট কমানোর ঘোষণা করেছে।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ-এর নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, “স্বাস্থ্যখাতে বৈশ্বিক সাহায্য কমানোর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে গর্ভবতী মহিলারা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই জরুরি ভিত্তিতে ধাত্রী, নার্স ও কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে, যাতে প্রত্যেক মা ও শিশুর জীবন বাঁচানো যায়।”
কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবও মাতৃস্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। WHO-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রায় ৪০ হাজার অতিরিক্ত নারীর মৃত্যু হয়েছে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়। এর কারণ হিসেবে কোভিড-১৯ এর জটিলতা এবং স্বাস্থ্যসেবার অপর্যাপ্ততাকেই দায়ী করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মাতৃমৃত্যুর হার বিশ্বে সব জায়গায় সমান নয়। সাব-সাহারান আফ্রিকায় মাতৃমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি, যা বিশ্ব মাতৃমৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশ। দরিদ্র দেশগুলোতেও এই হার অনেক বেশি, যেখানে ২০২৩ সালে মোট মাতৃমৃত্যুর ৪৩.৯ শতাংশ ঘটেছে।
এছাড়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতে গত দুই দশকে মাতৃমৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, “এই প্রতিবেদনে কিছু আশার আলো দেখা গেলেও, এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, বিশ্বের অনেক জায়গায় আজও গর্ভধারণ করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও মাতৃমৃত্যু রোধ ও চিকিৎসার উপায়গুলো আমাদের জানা আছে।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন